সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে ৬৫ দিন

সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2019, 02:25 PM
Updated : 16 May 2019, 02:25 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “প্রয়োজনে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড সদস্যরা কঠোর আইন ও বল প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে।” 

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে বন্ধ থাকবে মাছ ধরা। বাণিজ্যিক ট্রলারের পাশাপাশি সব ধরনের নৌযানের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

৬৫ দিনের এ নিষেধাজ্ঞাকে ‘মাছ আহরণের ছুটি’ হিসেব ভাবতে মৎস্যজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। 

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ও ক্রাস্টাসিয়ান্স (কঠিন আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী, কাঁকড়া) এর নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মাছের মজুদ সংরক্ষণ সুষ্ঠু ও সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করার স্বার্থেই ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।

এর সুফল হিসেবেই প্রজনন মৌসুমের পর জেলেরা বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “মাছ প্রাকৃতিক সম্পদ হলেও তা অফুরন্ত নয়। সমুদ্র মৎস্য সম্পদ সহনশীল পর্যায়ে আহরণ না করলে এমন সময় আসবে যখন সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হবে না।

"মাছ বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ডিম ছাড়ার মৌসুমে যদি আহরণ করেন, তাহলে তা তো আপনাদের ক্ষতি। তখন দেখা যাবে আমাদের সমুদ্র মৎস্যশূন্য হয়ে যাবে।"

মৎস্যজীবীদের ক্ষতি চান না মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রামে এসে আগাম বার্তা দিয়েছিলাম, সামনে ৬৫ দিন যেন আপনারা মাছ ধরা বন্ধ রাখেন। এবার এসে আবারও বলছি। 

"বারবার এই বার্তা দেওয়ার কারণ, মৎস্য সম্পদের সুফল আপনারা পাবেন বলে। তাই কষ্ট হলেও এ ৬৫ দিন মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকুন। পরে এর সুফল মিলবে।"

আগামী বছর থেকে মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময়ে এ অঞ্চলে মৎসজীবীদের প্রণোদনা ও খাদ্য উপকরণ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, এ বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৪৮ হাজার খাদ্য উপকরণের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে জেলেদের মধ্যে।

"আমরা চেষ্টা করছি আগামীতে আপনাদের ছাগল, ভেড়াসহ বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ দেব। যাতে আপনাদের মাছ ধরার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে না হয়।" 

আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, সব দেশেই কিছুসময় আহরণ বন্ধ থাকে। চীন সাগরে ২০ বছর যাবত ১৬ মে থেকে ১ অগাস্ট মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। ভারতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় ২০০০ সাল থেকে ৪৫-৬০ দিন বন্ধ থাকে। 

চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সভায় বলেন, জেলেদের কথাও ভাবতে হবে। কারণ তারা পুরাপুরি মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। 

"এই ৬৫ দিন যদি তারা মাছ আহরণে যেতে না পার তাহলে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে। যদি ৬৫ দিন থেকে কমানোর সুযোগ থাকে তাহলে সেই ব্যবস্থা করা হোক।" 

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, “আমি এই অঞ্চলে সরকারের প্রতিনিধি। তাই জেলেরা, ট্রলার মালিকরা আমার কাছে দাবি নিয়ে আসে। প্রতিমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, তাদের দিকটা একটু ভেবে দেখবেন। তারা দরিদ্র। মাছ আহরণ করতে না পারলে অভাবে থাকবে।”

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রাণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডলের সভাপতিত্বে এ মত বিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে মেরিন ফিশারিজ একাডেমির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মাসুক হাসানসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সকাল থেকে সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশ মৎস্যজীবী। 

প্রতিমন্ত্রী সভা শেষে বের হওয়ার পথে বাইরে অপেক্ষামাণ জেলেরা ওই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার আবেদন সম্বলিত বিভিন্ন ফেস্টুন-ব্যানারে দেখিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্ট করেন। পরে সিটি মেয়র গাড়ি থামিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।