নির্দেশনা উপেক্ষায় অচলাবস্থা ওমরগণি এমইএস কলেজে

সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের বেসরকারি ওমরগণি এমইএস কলেজ পরিচালনা কমিটি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ডিঙিয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2019, 05:04 PM
Updated : 2 May 2019, 05:04 PM

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এর বিরোধিতা করায় তাদের ভাতাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাতা ছাড়া বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তিন মাস ধরে কলেজটি সব শিক্ষকের কলেজ প্রদত্ত বেতন বন্ধ। আর দুই মাস ধরে বন্ধ এমপিও’র টাকাও।

এই পরিস্থিতিতে কলেজটিতে ‘অচলাবস্থার’ সৃষ্টি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার।

কলেজটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের সুপারিশে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, সভার আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও ‘বিবিধ’ বিষয় হিসেবে দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা কমিটি।

এর আগে একাধিকবার সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল কলেজটির পরিচালনা কমিটি।

এমইএস কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক আবু নঈম ইব্রাহিম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৫ সালের ২৮ জুন কলেজ পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এমপিওভুক্ত এবং নন এমপিওভুক্ত সবাই কলেজের পূর্ণকালীন শিক্ষক, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার পরিপন্থি।

“সেই সিদ্ধান্তের জের ধরে সর্বশেষ কমিটির সভায় যোগদানের তারিখের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেখানে সরকারি নির্দেশনায় সুষ্পষ্টভাবে শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার বিধান দেওয়া আছে, সেখানে কীভাবে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের এক কাতারে এনে যোগদানের তারিখের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়?”

তিনি বলেন, “খণ্ডকালীনদের অনৈতিক সুবিধা দিতে আগেও তাদের পূর্ণকালীন দেখিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়েছিল, যা মাউশি প্রত্যাখ্যান করেছে।”

কলেজটিতে এমপিও ও খণ্ডকালীন মিলিয়ে ৫৪ জন শিক্ষক রয়েছেন।

‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ) এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকা’র ধারা-১৩-এ তে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠাতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এতে বলা আছে, শিক্ষকদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতা তাদের প্রথম এমপিওভুক্তির তারিখ হতে গণনা করা হবে। আর এমপিওভুক্ত একই তারিখে হলে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের জন্য যোগদানের তারিখ বিবেচনা করা হবে। এবং এই জ্যেষ্ঠতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণ শুধু শিক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জন্য এই ধারা প্রযোজ্য নয়।

এর আগে ২০১৮ সালে কলেজের সাত খণ্ডকালীন শিক্ষককে পূর্ণকালীন দেখিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়েছিল।

ওই বছরের ২৬ নভেম্বর মাউশির সহকারী পরিচালক ফারহানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই আবেদন নাকচ করা হয়।

এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যাদের এমপিওভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে তারা খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের আরেক শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অতীতে এমপিওভুক্তির পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খণ্ডকালীন এসব শিক্ষকদের কেউ কেউ অনুত্তীর্ণ হয়েছেন।

“অনুত্তীর্ণ শিক্ষকরা কিভাবে জ্যেষ্ঠতা পাবেন? তাদের যদি জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়, তাহলে এনটিআরসিএ কর্তৃক মেধাতালিকা অনুসারে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা তাদের জুনিয়র হবেন। অথচ এসব খণ্ডকালীন শিক্ষকদের মধ্যে দুজনের নিবন্ধনই নেই।”

এদিকে কলেজ পরিচালনা কমিটির এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় ২ এপ্রিল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শিক্ষক আবু নঈম ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, “ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার পর আমরা বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। এখন তিন মাস ধরে আমাদের কলেজ প্রদত্ত বেতনই দেওয়া হচ্ছে না। মার্চ ও এপ্রিল মাসের এমপিও বেতনও বাকি। বৈশাখী ভাতাও আটকে আছে।”

‘বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেজুলেশন ১৯৯৪’ এর ১০ ধারায় খণ্ডকালীন শিক্ষকদের সম্মানি ও ভাতা পূর্বনির্ধারিত হবে এবং নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকবে বলে নির্দেশিত আছে।

ওই নির্দেশনা অনুসারে এই কলেজে খণ্ডকালীন হিসেবে যোগ দেওয়া শিক্ষকদের নিয়োগপত্রে বেতন-ভাতা বাবদ মোট কত টাকা করে পাবেন তা উল্লেখ করা আছে।

খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এরকম একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

বেতন নিয়ে জটিলতায় খণ্ডকালীন শিক্ষকদের কয়েকজন গত ২৫ এপ্রিল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে অশোভন আচরণও করেছেন, যার উল্লেখ করে অধ্যক্ষ ওইদিনই খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।  

তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে না চেয়ে তাহমিনা বলেন, “কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেশের বাইরে আছেন। তিনিই এসব বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।”

তবে কলেজে ‘অচলাবস্থা’ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “তিন মাস ধরে সবারই বেতন বন্ধ। একটা অচলাবস্থা চলছে।

“কলেজ কমিটি সম্প্রতি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। চেয়ারম্যান দেশে না থাকায় তিনি এখনও যোগ দিতে পারেননি। আশা করি, তিনি দায়িত্ব নিয়ে সব সমাধান করবেন।”

কলেজটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেতন নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। অধ্যক্ষ বিল নিয়ে আসেননি তাই বেতন হয়নি।”

খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনি অফিসে আসেন। তখন কথা বলা যাবে।”

এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমি জানি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থা নিচ্ছে।”