কোকেন কাণ্ড: ১০ আসামির বিচার শুরু

চার বছর আগে তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2019, 01:46 PM
Updated : 29 April 2019, 01:46 PM

সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা এ আদেশ দেন বলে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরীর জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগামী ১৯ থেকে ২২ মে পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। টানা পাঁচদিন এ মামলায় সাক্ষ্য নেওয়া হবে।”

আলোচিত এই মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তার মধ্যে আছেন চট্টগ্রামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ এবং দুই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।

অন্য আসামিরা হলেন- নূর মোহাম্মদের ভাই মোস্তাক আহম্মদ, খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে এম আজাদ এবং সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

এদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন। তার ভাই মোস্তক আহম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান এবং বকুল মিয়াকেও পলাতক দেখানো হয়েছে। কারাগারে আছেন গোলাম মোস্তফা সোহেল এবং আতিকুর রহমান। বাকি চার আসামি জামিনে আছেন।

মামলায় র‌্যাবের সম্পূরক অভিযোগপত্রে এই ১০ জনকেই আসামি করা হয়েছিল।

সোমবার আদালতে আসামিদের পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়।

এ বিষয়ে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে প্রায় আধাঘণ্টা শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন।

একই ঘটনায় চোরাচালানের অভিযোগে করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন এখনও জমা পড়েনি বলে জানান পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ওই অভিযোগপত্র জমা পড়লে তখন সেই ধারায়ও অভিযোগ গঠন করা হবে।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ওই বছরের ১২ মে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।

পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে বন্দরের পরীক্ষায় এসব নমুনায় কোকেনের উপস্থিতি না মেলায় ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুই পরীক্ষাগারেই নমুনায় তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রামের বন্দর থানায় মাদক আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত মামলায় চোরাচালানের ধারা সংযোগের নির্দেশ দেয়।

সেসময়ের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান আটজনের বিরুদ্ধে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

এ কারণে ‘তদন্তে ত্রুটি’ আছে উল্লেখ করে আদালত ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর র‌্যাবের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল এ মামলায় অধিকতর তদন্ত শেষে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন র‌্যাব-৭ এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।

ওই বছরের ১৩ এপ্রিল শুনানি শেষে আদালত সম্পূরক অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, নূর মোহাম্মদের জ্ঞাতসারেই তেলের সাথে মিশিয়ে কোকেন আমদানি করা হয় এবং এই পুরো ঘটনার শুরু থেকেই তিনি অবগত ছিলেন।