বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩২ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে একথা জানান তিনি।
শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি বন্দরের বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং জাহাজজট কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।
এক প্রশ্নের জবাবে জুলফিকার আজিজ বলেন, “মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত আমাদের আছে। সেখানে ফিজিবিলিটি স্টাডিও হয়েছে।
“দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী যারা সেখানে বিনিয়োগ করছে, তারাও ওই অঞ্চলে বন্দর করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ওই এলাকায় শিল্পগ্রুপগুলোকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বন্দর দরকার।”
অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে শিল্পায়নের কাজ শুরু হলে বন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করছি আগামী দুই-পাঁচ বছরের মধ্যে সেখানে বন্দর নির্মাণের বিষয়টি এগিয়ে যাবে।”
আগামী বছরের জুনে বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হবে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এটিতে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানো যাবে।
তিনি বলেন, এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন পতেঙ্গা টার্মিনালের ১৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ৬০০ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা তিনটি জাহাজ ভিড়ানো যাবে। টার্মিনালে একসঙ্গে সাড়ে চার হাজার কনটেইনার রাখা যাবে।
২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন করা হয়।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পতেঙ্গা টার্মিনালের কাছাকাছি ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মাঝামাঝি ‘লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল’ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। পাঁচ জেটির প্রস্তাবিত এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০২২ সাল থেকে চালু করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এই টার্মিনালে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জুলফিকার আজিজ বলেন, নগরীর পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল ২০২১ সালের মধ্যে দৃশ্যমান হবে। বে-টার্মিনালের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির প্রস্তাবনা (ডিপিপি) আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ডিপিপি অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করা হবে এবং কাজ শুরু হবে।
“সুনির্দিষ্টভাবে সময় বলা সম্ভব নয়। প্রথমে ডিপিপি অনুমোদন হবে, তারপর টেন্ডারিংয়ে যাব। এরপর কাজ শুরু হবে। তবে ২০২০ অথবা ২০২১ সালের মধ্যে বে-টার্মিনালের কাজ দৃশ্যমান হবে।”
বন্দর চেয়ারম্যান জানান, টার্মিনালটির জন্য গত বছর অক্টোবরে ৬৭ একর ব্যক্তিমালিকাধীন জমি বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি ৮০৩ একর খাসজমি বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে। এখন জেলা প্রশাসনকে জমির দাম পরিশোধ করে তা বুঝে নেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সমুদ্রগামী জাহাজ ভেড়ানোর জেটি ছাড়াও অভ্যন্তরীণ নদীপথে চলাচলের উপযোগী জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য নতুন করে ১৫টি লাইটার জেটি নির্মাণ করা হবে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান। এই ১৫টি লাইটার জেটি নির্মাণ হবে কর্ণফুলী নদীর লালদিয়া এলাকায়, চান্দগাঁও হামিদচর এবং সীতাকুণ্ড এলাকায়।
বর্তমানে সদরঘাট এলাকায় এ ধরনের পাঁচটি জেটি নির্মাণ করে ইজারা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দরে জাহাজ জট পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এখন পণ্য হাতে পেতে আমদানিকারকদের সপ্তাহ জুড়ে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না।
২০১৭ সালে যেখানে প্রতিদিন ১০-১২ টি জাহাজ জেটিতে ভিড়ানোর অপেক্ষায় থাকতে হতো সেখানে ২০১৮ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে দুই থেকে তিনটিতে।
আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত হওয়াই কনটেইনার পরিবহনের গতিশীলতা ৩০ শতাংশ বেড়েছে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ২০১৭ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ ২৬ লাখ ৬৭ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ লাখ ৩ হাজার। প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ।
কর্ণফুলী নদী খননের চলমান কাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে নতুন উদ্যমে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৪২ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের এ প্রকল্পের কাজ করছে। এতে বন্দরের খরচ ২৪২ কোটি টাকা। চার বছরে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হবে।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দর সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম, বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর খন্দকার আক্তার হোসেনসহ বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।