‘নৌযানের আঘাতে’ হালদার মা মাছের মৃত্যু

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর হাটহাজারী অংশের খলিফাঘোনা এলাকায় নৌযানের আঘাতে একটি মা মাছ মারা গেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2019, 03:17 PM
Updated : 9 April 2019, 03:51 PM

এ নিয়ে একমাসের ব্যবধানে নদীতে তিনটি মা মাছ মারা গেল। সবগুলো নৌযানের আঘাতে মারা গেছে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

মঙ্গলবার খলিফাঘোনা এলাকায় মৃত একটি মৃগেল মাছ ভেসে ওঠে। আট কেজি ওজনের মাছটি প্রায় ৩৩ ইঞ্চি লম্বা।

এর আগে ৪ মার্চ নদীর রাউজান উপজেলার অংকুরীঘোনা এলাকায় ১২ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ এবং হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মার্দাশা আমতোয়া এলাকায় তিন কেজি ওজনের আইড় মাছ মারা যায়।

তিনটি মাছের শরীরেই ধারালো কিছুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

চলতি এপ্রিল মাসে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

এরকম সময় একের পর এক মা মাছের মৃত্যু ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করছেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হালদায় এখন ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। অমবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে বৃষ্টির সাথে পাহাড়ি ঢল নামলেই ডিম পাড়বে মা মাছ।

“এসময়টাতে মূলত ডিম ছাড়ার জন্যই মা মাছ হালদায় আসে। এরকম সময়ে মা মাছের মৃত্যু খুব দুঃখজনক। এভাবে মা মাছ মারা গেলে ডিমের পরিমাণ কমবে, পাশাপাশি মা মাছের আগমনও কমতে পারে।”

মঙ্গলবার ভেসে ওঠা মৃগেল মাছটির বিষয়ে মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, “এটি একটি মা মাছ। এটির ঘাড়ের কাছে ধারালো কিছুর আঘাতের চিহ্ন আছে। ঘাড়ের অংশটি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল। সম্ভবত ড্রেজারের আঘাতে এমনটা হয়েছে।”

হালদায় গত বছরের শুরুতে ড্রেজারের আঘাতে তিন মাসে ১৬টি ডলফিন মারা যাওয়ার পর নদীর বালুমহালগুলো আর ইজারা দেয়নি জেলা প্রশাসন। এরপর নদীতে গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যুর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

কিন্তু চলতি মৌসুমে এক মাসে তিনটি মাছ মারা যাওয়ার পর নদীতে গোপনে বালুবাহী ড্রেজার চলাচলের বিষয়টি আবার প্রমাণ হল বলে দাবি করেন হালদা গবেষক মনজুরুল কিবরীয়া।

এদিকে নদীর হাটহাজারী অংশে ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে ঢুকে পড়ায় এক জেলে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।

দণ্ডিত জেলে আবদুল আজিজ কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা দানু মেম্বার বাড়ি এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে।

রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এপ্রিল থেকে জুন হালদায় প্রজনন মৌসুম। এসময়ে নদীতে ইঞ্জিনচালিত সব ধরণের নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

তিনি বলেন, “হালদায় প্রজনন মৌসুমে মা মাছের বিচরণ অবাধ ও নিরাপদ করতে আমরা ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করেছি বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখতে।

“আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে উনারা হালদায় বাঁধ নির্মাণে সব ধরণের যন্ত্রচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছেন।”