ইয়াবার রোহিঙ্গা বাহক ধরা পড়লেও আড়ালে হোতারা

বহু রোহিঙ্গা শরণার্থী ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়ে পাচারের কথা স্বীকার করলেও নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে মাদকের মূল কারবারিরা।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2019, 05:57 PM
Updated : 26 March 2019, 05:57 PM

গ্রেপ্তার রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য নিয়ে এসব মামলায় যে অভিযোগপত্র জমা পড়ছে, তাতে শুধু বাহককেই আসামি করা হচ্ছে।

ইয়াবার কারবারিদের শনাক্ত করতে না পারার জন্য প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, লোকবল সঙ্কট এবং আইনি বাধ্যবাধকতাকে দায়ী করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা।

অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “আমাদের অভিযানে মূলত ইয়াবার বাহকরাই ধরা পড়ছে।

“যাদের কাছ থেকে ইয়াবাগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে কিংবা যাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা, তাদের আমরা শনাক্ত করতে পারছি না।”

বাংলাদেশে এখন মাদক হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে। কক্সবাজারের টেকনাফ হয়েই ইয়াবা আসে, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

মাদক নির্মূলে গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান শুরুর পর কথিত বন্দুকযুদ্ধে অনেকে মারা পড়ার পর এবছর ঘটা করে কারবারিদের আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান করলেও ইয়াবা আসা থেমে নেই।

মিয়ানমারে থেকে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের এখন ইয়াবা বহনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। টেকনাফের উখিয়া, কুতুপালং, লেদাসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের অনেক বাসিন্দা ইয়াবাসহ ধরা পড়েছেন গত দুই বছরে।

ডিএনসির চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের হিসাবে, ২০১৭ সালের ৩০ অগাস্ট থেকে ২০১৯ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত চার নারীসহ ৫০ জন রোহিঙ্গাকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় এক লাখ ৩৬ হাজার ইয়াবা।

২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে আট রোহিঙ্গা। তাদের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার ইয়াবা। এ নিয়ে কোতোয়ালি থানায় ছয়টি ও ডবলমুরিং থানায় একটিসহ মোট সাতটি মামলা হয়েছে।

ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার দুই রোহিঙ্গা পুরুষ

২০১৮ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৬ জনকে এবং ২০১৭ সালে ১৬ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে টেকনাফে বিশেষ অভিযান চালিয়ে একসঙ্গে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় ৪০ হাজার ইয়াবা।

এসব ঘটনায় যে ৩৮টি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৩০টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শামীম আহমেদ। এসব অভিযোগপত্রে চিহ্নিত হয়নি মাদকের মূল কারবারিরা।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শামীম বলেন, “ইয়াবাসহ যাদের আমরা গ্রেপ্তার করছি তাদের মোবাইলে কোনো নম্বর পাওয়া যায় না এবং তারাও কোনো নম্বরের কথা স্বীকার করে না। প্রযুক্তিগত কারণে আমরা তাদের কল রেকর্ড দেখতে পারি না।”

ধরা পড়াদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ও ‘দুরূহ’ জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব শরণার্থী অপরাধীরা মানসিকভাবে খুব দৃঢ় থাকেন। তারা সহজেই কোনো কিছু প্রকাশ করেন না।” 

ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা নারী

ডিএনসি কর্মকর্তাদের ভাষ্যে, ইয়াবাসহ মাদকের মূল জায়গায় প্রবেশ করতে হলে যে ধরনের জনবল-প্রযুক্তি ও অন্যান্য বিষয় দরকার তার কিছুই তাদের নেই।

ফলে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পাওয়া তথ্যই তাদের কাছে মূল ভরসা। ফলে বাহককেই মূল আসামি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।

সর্বোচ্চ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে এসব মামলার তদন্ত শেষ করার বাধ্যবাধকতার কারণেও তদন্তের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না বলে কারণ দেখাচ্ছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

উপ-পরিচালক শামীম বলেন, “অন্যান্য সংস্থাগুলোতে লোকবল থাকায় তারা একটি মামলায় অধিক সময় ব্যয় করে কাজ করতে পারেন। ডিএনসিতে লোকবল কম থাকায় একজনকে অনেক মামলার তদন্ত করতে হয়। ফলে বেশিদূর এগুনো সম্ভবপর হয়ে উঠে না।”

ইয়াবার মূল কারবারি পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তিনি।