প্রশ্ন উত্থাপনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুললেন চবি উপাচার্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ নিয়ে বিবৃতিদাতা আট শিক্ষকের অনেকেই গবেষণা জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে দাবি করলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2019, 03:33 PM
Updated : 10 March 2019, 07:11 PM

বিবৃতিদাতা শিক্ষকদের বিভিন্ন ‘অনৈতিক কাজে সমর্থন না দেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায়’ ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ এ তার মনোনয়নকে মেনে নিতে পারছেন না বলেও তিনি দাবি করেছেন।

‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ এ উপাচার্যের নিজেই অধিষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিয়ে এর আগে উপ-উপাচার্য শিরিন আখতার ও কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্যও ভিন্নমত দিয়েছিলেন।

এছাড়া এর প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষকও (যারা সিনেট সদস্যও) শনিবার গণমাধ্যমে পৃথক বিবৃতিও দেন।

বঙ্গবন্ধু চেয়ারে তার অধিষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার মধ্যে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন উপাচার্য ইফতেখার।

‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’র নির্বাহী কমিটির সর্বসম্মতিতেই গবেষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে দাবি করেন উপাচার্য।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি গত ৭ মার্চ বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা না নেওয়ার শর্তে এ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।এ বিষয়ে গুটিকয়েক সম্মানিত শিক্ষক গণমাধ্যমে নেতিবাচক, মিথ্যা, ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তসৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। তারা বঙ্গবন্ধু চেয়ারে আমাকে যোগদান মেনে নিতে পারছেন না।’’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ অতীতে প্রচলিত সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, সুযোগ-সুবিধা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছি। এ কারণেই আমার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষকসহ কুচক্রীমহল সক্রিয় হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই আট শিক্ষকের মধ্যে একজন তার স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে আমার ওপর নানাভাবে অনৈতিক চাপ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে তিনি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ রাখতে না পারায় শিক্ষক হতে পারেননি।”

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ এ অবৈধ প্রক্রিয়ায় আত্তীকরণের মাধ্যমে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের মধ্যে বিবৃতিদাতা আটজন শিক্ষকের মধ্যে এক শিক্ষকের স্ত্রীও রয়েছেন্। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী যিনি ওই ইনস্টিটিউটের অন্যান্য শিক্ষকের মতো চাকুরিচ্যুত হন।

“আরেকজন কোটা আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তার অন্যতম কুশীলব। আরেকজন প্রসাশনিক পদে থেকে ছাত্র সংগঠনের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করার অভিযোগ ওঠায় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম।”

উপাচার্য বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় বিশ্ববিদ্যায় নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়া এবং কাউকে নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ না দেওয়ায় আমাকে বঙ্গবন্ধু চেয়ারে যোগদান করাকে নিয়ে মিথ্যাচারে মেতে উঠেছেন।

“আমি কোনোদিন নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ দেইনি এবং নিজেও স্বজনপ্রীতি করিনি।”

বঙ্গবন্ধু চেয়ার নিয়ে বিবৃতিদাতা আট শিক্ষককের দুইজন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৩.০০ পয়েন্ট প্রাপ্তদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া ‘কারিগর’ দাবি করে তিনি বলেন, “নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকেউ বর্তমানে জামাত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। মূলত সেই অপশক্তিই ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ারে’র বিরোধিতা করে আসছে।”

উপাচার্য ছাত্রজীবন থেকেই মুজিববাদী ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।

পাল্টা বিবৃতি শিক্ষকদের

উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষক পাল্টা এক বিবৃতিতে বলেন, অধ্যাপক ইফতেখার 'ভিত্তিহীন ও ব্যক্তিগত আক্রমণ’ চালিয়েছেন।

এই শিক্ষকরা হলেন- নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল, আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক এস এস মনিরুল হাসান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর, লোকপ্রশাসনের অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের বিবৃতিতে যেসব বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে উপাচার্য তার একটিও খণ্ডন করতে পারেননি। তিনি যেসব অভিযোগের কথা বলছেন, সেসব তার বশংবদদের কারসাজি এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল শিক্ষকদের দমন করার অপচেষ্টা, যা তার জন্যই ব্যুমেরাং হবে।"

বিবৃতিতে বলা হয়, “উপাচার্য প্রশ্ন করেছেন ৭৬/৫০ জনের মধ্যে কেবল ৮ জন কেন প্রশ্ন তুলেছেন। একথা অনস্বীকার্য যে, ৮ জন কেন ১ জন বললেও সত্য সত্যই, সংখ্যার বিবেচনায় সত্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করা সভ্য সমাজে সম্ভব নয়।

“বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে তার নিয়োগ যে নিয়ম বহির্ভুত তা মিডিয়ায় তার প্রদত্ত বক্তব্যেই প্রমাণিত। বঙ্গবন্ধু চেয়ারে বসার অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিব্রত হয়ে এবং কোন গ্রহণযোগ্য সদুত্তর দিতে না পেরে তিনি এখন ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করে দৃষ্টি অন্যত্র সরাবার বৃথা চেষ্টা করছেন।”