বিমান ছিনতাই: মামলায় আসামি পলাশসহ কয়েকজন

মাঝ আকাশে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় নিহত পলাশ আহমেদসহ কয়েকজনকে আসামি করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 03:43 PM
Updated : 25 Feb 2019, 03:43 PM

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে সোমবার রাতে থানায় মামলাটি করেন।

এই বিমান ছিনতাইচেষ্টায় একজনই জড়িত ছিলেন বলে অভিযান চালিয়ে বিমানটি মুক্ত করার পর এতে যুক্ত সব কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।

পলাশ আহমেদ নামে ওই যুবক রোববার সন্ধ্যায় শাহ আমানত বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি নামার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন।

পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপর বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, বেবিচকের মামলায় পলাশ আহমেদের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।

এজাহারে পলাশের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “উক্ত আসামি তাহার সহযোগী অপরাপর অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহায়তায় উক্ত অপরাধ (বিমান ছিনতাই) সংঘটনের চেষ্টা করিয়াছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।”

অজ্ঞাতনামা এই আসামিদের ভূমিকার বিষয়ে এজাহারে আর কিছু বলা হয়নি।

এজাহারেই আবার ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার সময় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী হিসেবে শুধু একজন দুষ্কৃতকারীর কথাই উল্লেখ করা হয়।

তাতে বলা হয়, বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ১৫ মিনিট পরই পলাশ বোমা সদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।

“কেবিন ক্রু সাগর ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী (পলাশ) বিমানের মাঝখান দিয়ে দৌড় দিয়ে সামনের ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে। তার হাতে বোমা ও অস্ত্র সদৃশ বস্ত দেখা যায়।

“উক্ত দুষ্কৃতকারী তার কিছু দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে। অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেবে মর্মে হুমকি দেয়।”

পলাশ মারা যাওয়ার পর তার হাতে থাকা পিস্তলটি উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছিল। পরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ জানায়, ওই অস্ত্রটি একটি খেলনা পিস্তল। বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও একই কথা জানান।

এদিকে ওই বিমানের যাত্রীদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ অন্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, পলাশ তার পিস্তল থেকে দুটি গুলি ছুড়েছিল।

এজাহারে বলা হয়, বিমান উড়ন্ত অবস্থায় পলাশ দুটি ‘পটকা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ’ ঘটিয়েছিলেন।  

অভিযানের পর শাহ আমানত বিমানবন্দরে ছিনতাইকারী যুবকের লাশ ঘিরে কমান্ডোরা

ওই যুবক তার স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন অভিযান পরিচালনাকারীরা।

পরে জানা যায়, তিনি চিত্রনায়িকা শিমলার স্বামী ছিলেন, সাড়ে ৩ মাস আগে শিমলা তাকে তালাক দেন।

এজাহারে আসামিদের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, “পলাশ আহমেদ বিমানের পাইলট, কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের হুমকি দিয়া জিম্মি করত আতঙ্ক সৃষ্টি করিয়া বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।”

ওসি উৎপল বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৩ ও ৬ (১) ধারা এবং বিমান-নিরাপত্তা বিরোধী অপরাধ দমন আইনের ১১ (২) ও ১৩ (২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

বিমান-নিরাপত্তা বিরোধী অপরাধ দমন আইনের ১১ (২) ধারা অনুযায়ী কোনো বিমান উড্ডয়নে থাকাকালে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বা ভীতি প্রদর্শন বা অন্য কোনো উপায়ে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দখলের চেষ্টা করলে তার শাস্তি কমপক্ষে ৫ বছর কারাদণ্ড, অনধিক ২০ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড।

আইনটির ১৩ (২) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনি ও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বিমান উড্ডয়নে থাকাকালে সহিংস কাজ করেন, তাহলেও শাস্তি একই।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৩ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ৬ (১) ধারায়ও সর্বোচ্চ শাস্তি একই।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর মামলা করার কারণ দেখিয়ে এজাহারে বলা হয়েছে, “যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যস্থলে গমন, বিমানবন্দরে সুষ্ঠুভাবে বিমানের চলাচল, আবহাওয়াজনিত কারণ এবং মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে এজাহারটি দাখিল করতে বিলম্ব হয়।”

ঝড়তোলা এই ঘটনা তদন্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।