২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে চট্টগ্রামের দুই কলেজের যত আয়োজন

অমর একুশে উপলক্ষ্যে দেয়ালিকা, দেয়ালচিত্র ও আলপনায় সেজেছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজ এবং হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2019, 02:26 PM
Updated : 20 Feb 2019, 02:26 PM

কলেজ দুটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এসব আয়োজন করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি পালনে দুই কলেজেই থাকছে দিনব্যাপী আয়োজন।

চট্টগ্রাম কলেজে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত আয়োজন করা হয়েছে দেয়ালিকা প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার। এতে কলেজের ১৭টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন।

অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনের প্রাঙ্গনে বুধবার দুপুরে ছিল শ’খানেক শিক্ষার্থীর ভিড়। নিজ নিজ বিভাগের দেয়ালিকা নিয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে হাজির হন প্রদর্শনীর জন্য।

বাংলা বিভাগের দেয়ালিকাটির নাম ‘অরুণোদয়’। বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লামিয়া সূচি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা ভাষাকে জাতীয় জীবনে সূর্যের সাথে তুলনা করেই এই নামকরণ।

দেয়ালিকায় স্থান পেয়েছে ভাষা শহীদদের ছবি ও পরিচিতির অ্যালবাম, প্রথম শহীদ মিনারের ছবি। নিচের অংশে রক্তাক্ত হাতের ছাপে শহীদের আত্মত্যাগের প্রতীকী উপস্থাপন।

ভিড় ছিল প্রাণি বিদ্যা বিভাগের দেয়ালিকা ‘অনিবার্ণ একুশ’ ঘিরে।

বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিনা তামান্না বলেন, “আমাদের দেয়ালিকায় নারী ভাষা সৈনিকদের তথ্য তুলে ধরেছি। চট্টগ্রামের প্রতিভা মুৎসুদ্দী তাদেরই একজন।

“রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের সে সময়ের শিক্ষার্থী ফরমান উল্লাহ ও মো. ইসহাক। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখা চট্টগ্রামের এম এ আজিজ ও মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ছবি ও অবদান রাখা হয়েছে দেয়ালিকায়।”

১৫ জনের যে দলটি এই দেয়ালিকা তৈরি করেছেন তাদের আরেকজন শামীমা আক্তার।

তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলনের স্মারক নোট ও ডাক টিকেটের ছবি, ভাষার ইতিহাস, খনার বচন, ইউনেসকোর স্বীকৃতি লাভসহ পুরো ভাষা আন্দোলনকে এই আয়োজনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”

নজর কেড়েছে ইংরেজি বিভাগের ‘কৃষ্ণচূড়া’, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ‘অহংকার’ এবং ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ‘শেকড় থেকে শিখরে’ শীর্ষক দেয়ালিকা।

আয়োজনের দায়িত্বে থাকা বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, সবগুলো বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবারের দেয়ালিকা আয়োজনে অংশ নিয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষার ইতিহাস জানা এবং অন্যদের জানানোর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একুশে পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না করে সবাইকে সম্পৃক্ত করতেই এ আয়োজন।

“দেয়ালিকায় অনেক নতুনত্ব ও প্রতীকি কাজ হয়েছে। তারা ২১ ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে।”

হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের প্রবেশ পথের দুই পাশের দেয়াল সাজানো হচ্ছে দেয়ালচিত্রে।

এর এক পাশে বাংলা বর্ণমালা ও ভাষার দাবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন এবং একুশের মিছিলের অবয়ব। আর অন্য পাশে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’।

কাছেই শহীদ মিনারের পাদদেশে আলপনা আঁকছিলেন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসমত জাহান কচি, ফারজানা আক্তার ও মুন্না দে এবং বিবিএর শিক্ষার্থী তৌহিদুল আলম শুভ।

কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুন বলেন, তিন বছর ধরে একুশে ফেব্রুয়ারিতে কলেজে দেয়াল চিত্র আঁকা হয়। শহীদ মিনার পর্যন্ত পথে আঁকা হয় আলপনা।

“আগে এগুলো হত না। আমরা শিক্ষার্থীদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সচেতন করতে চাই। জানাতে চাই একুশের ইতিহাস।”

কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, একুশের ভোরে কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন ছাত্র-শিক্ষক সবাই। তারপর প্রভাত ফেরী করে যাবেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে আছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরষ্কার বিতরণ, শহীদদের স্মরণে দোয়াসহ নানা কর্মসূচি।