মোছাম্মৎ আশা আক্তার (২৩) নামের ওই নারীকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার সকালে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। তিনি বগুড়া সদর উপজেলার ঠনঠনিয়া পাড়ার বাসিন্দা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে পাহাড়তলী থানার আব্দুল আলী নগর নেছারিয়া মাদ্রাসা এলাকায় ইউসুফ মিয়ার একটি ভাড়া বাসা থেকে আনুমানিক ২৯ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে একটি মোবাইল ফোনকলের সূত্র ধরে নিহত যুবকের পরিচয় উদঘাটনের পাশাপাশি তার দ্বিতীয় স্ত্রী আশা আক্তারেরও খোঁজ পায় পুলিশ।
নিহত যুবকের নাম মো. শামীম। পেশায় বাবুর্চি শামীমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে; থাকতেন চট্টগ্রামের খুলশী ঢেবার পাড় এলাকায়। বছর খানেক আগে ফেইসবুকে পরিচয়ের সূত্রে আশাকে বিয়ে করেন তিনি।
“হত্যাকাণ্ডের পর আশা শামীমের মোবাইল সেটও নিয়ে যায়। পরে সেটি ঢাকার রাস্তায় ফেলে দেয়। শামীম যে বাসায় খুন হয় সেটি ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়িওয়ালার মেয়েকে ফোন করেছিল। সেই ফোনকলের সূত্র ধরে আমরা তার পরিবার ও আশার সন্ধান পেতে কাজ শুরু করি।”
পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বগুড়ায় গিয়ে মঙ্গলবার আশার কর্মস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।
ওসি সদীপ দাশ বলেন, “আশা জানিয়েছে বিয়ের মাস ছয়েক পর আশা জানতে পারে শামীমের আগের স্ত্রী আছে। সেখানে তার দুইটি সন্তানও আছে। আশার দাবি, শামীমের সাথে আরও একাধিক নারীর সম্পর্ক ছিল। তাদের সাথে তোলা বিভিন্ন ‘অন্তরঙ্গ ছবি’ শামীম নিজেই আশার কাছে পাঠাত।”
বুধবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “শামীম তার আগে স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার কথা গোপন করে বগুড়ায় গিয়ে আশাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর শামীমের স্থায়ীভাবে বগুড়ায় থাকার কথা থাকলেও প্রায়ই চট্টগ্রাম চলে আসতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আশা জানিয়েছে, শামীমকে বগুড়ায় থাকার জন্য এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ করে একটি ইজি বাইকও কিনে দিয়েছিল। তার আগেও শামীম আশার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল।
“তবে বিভিন্ন সময়ে শামীম বগুড়া গেলেও কয়েকদিন থেকে চট্টগ্রামে চলে আসত। ইজি বাইক না চালানোর কারণে শামীমের জন্য আশা চাকরিও ঠিক করেছিল বলে জানিয়েছে।”
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “এতকিছু করার পরও স্বামীকে নিজের করে না পাওয়ায় ও একাধিক নারীর সাথে মেলামেশার ক্ষোভ থেকে শামীমকে খুন করে আশা।”
আশার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের দুইদিন আগে শামীম বাসাটি ঠিক করে আশাকে আনতে বগুড়া যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে আশাকে নিয়ে চট্টগ্রাম এসে নতুন বাসায় ওঠেন।
“বাসায় ওঠার পর শামীম ঘুমিয়ে পড়লে আশা তার গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে আবার বগুড়া চলে যায়,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা জানান কুসুম দেওয়ান।
বগুড়া থেকে আসার সময়ই আশা ছুরি কিনে এনেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।