ফুল-পোশাকের রঙে হেসেছে প্রাণ

শীতের আড়ষ্টতা কাটিয়ে রঙ ছড়িয়েছে প্রকৃতি, ফাল্গুনের প্রথম দিনে সেই রঙ যেন সঞ্চারিত মানুষের মনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকও চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2019, 03:53 PM
Updated : 13 Feb 2019, 04:05 PM

বাসন্তি রঙের শাড়ি, খোঁপায় ফুল, শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হাত-গলায় গহনা; দৃষ্টিনন্দন সাজে কিশোরী-তরুণীদের প্রাণচঞ্চলতায় ভরে ওঠে বসন্ত বরণের আঙিনা। রঙিন পোশাকে তাদের সঙ্গী হয়েছিলেন তরুণ-যুবারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় আবির মেখে বসন্তবরণ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তরুণ-তরুণীদের মতো শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষের সাজ-পোশাকেও দেখা যায় রঙের খেলা।

রাজধানীতে বসন্তবরণের অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা। বুধবার ভোর থেকেই বকুলতলায় শুরু হয় গান, নৃত্যে ঋতুরাজ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। সারা দিনই রঙিন পোশাকে সেখানে জড়ো হয় মানুষ। রবীন্দ্র সরোবর, বাহাদুর শাহ পার্কসহ আরও কয়েকটি জায়গায় হয় বসন্তবরণের অনুষ্ঠান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বুধবার নাচে-গানে বসন্তবরণ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তবে বসন্তের রঙের ছটা ছড়িয়েছে শহরজুড়েই; বেইলি রোডসহ যেসব জায়গায় জমে আড্ডা সেখানেই ছড়িয়েছে এই উৎসবের আমেজ। শহরের অলিগলিতেও দেখা যায় বাসন্তি রঙের শাড়ি পরিহিত নারীর হাত-গলায় ফুলের মালা। খোঁপায় গোজা গোলাপ, গাঁদা।   

বসন্তবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় ছিল শিশুরাও। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ঢাকার মতো চট্টগ্রাম শহরেও বসন্তবরণে হয় নানা আনুষ্ঠানিকতা, বিভিন্ন সংগঠনের বর্ণিল আয়োজনে দিনব্যাপী মাতোয়ারা থাকে বন্দরনগরী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বুধবার নাচে-গানে বসন্তবরণ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

নগরীর সিআরবি শিরীষ তলায় প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের আয়োজনে বসন্ত উৎসবের সূচনা হয় ঢোল বাদন ও বেহালার সুরে।

বসন্ত উৎসবের উদ্বোধন করে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “মানুষ প্রকৃতির মতো করে বসন্তকে ধারণ করে এগিয়ে যায়। বসন্তে প্রকৃতিতে যেমন প্রাণের স্পন্দন তৈরি হয়, তেমনি মানুষের জীবনেও।”

চট্টগ্রামে বসন্তবরণের অনুষ্ঠান

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি বলেন, “বসন্তে প্রকৃতি সেজেছে অন্যরূপে। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশে প্রাচীনকাল থেকে বসন্ত উৎসব হয়ে আসছে। বসন্ত উৎসব বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “প্রকৃতির সময়কে ধারণ করে বিভিন্ন উৎসব পালন বাঙালির ঐতিহ্য, চিরায়ত রীতি। বাঙালির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ধরে রেখে আমরা এগিয়ে যাব। এগুলো আমাদের শেকড়, বাঙালির অস্তিত্বের ভিত।”

প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব প্রমুখ।

এবার প্রথমবারের মতো নগরীর পাহাড়তলীতে রেলওয়ে জাদুঘর এলাকায় বসন্তবরণের আয়োজন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদের একটি অংশ।

চট্টগ্রামের প্রথম আবৃত্তি সংগঠন বোধন আবৃত্তি পরিষদ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং পাহাড়তলী রেলওয়ে জাদুঘরের সামনে শেখ রাসেল ময়দানে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে।

শহীদ মিনারে স্বরিৎ ললিতকলা কেন্দ্রের শিল্পীদের সম্মিলিত বংশীবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বোধনের বসন্তবরণ। এই আয়োজনের মূলপর্বের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান।  

পরিষদের শিল্পীদের একক আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় ফাগুন সম্ভাষণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বুধবার নাচে-গানে বসন্তবরণ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সম্মিলিত আবৃত্তি জোটের চট্টগ্রামের সভাপতি অঞ্চল চৌধুরী, বোধন আবৃত্তি পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল হালিম দোভাষ।

বসন্তবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলার বসন্তবরণ উৎসবে অনেকে আসেন সপরিবারে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

বেহালা ও বাঁশির সুরের পরিবেশনা, একক নাচ-গানের পাশাপাশি একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি পরিবেশিত হয় উৎসবে।

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাত পর্যন্ত চলে বসন্তবরণের এই আয়োজন।