ক্রিকেটে অন্যরকম বিকাল কাটালো পাহাড়তলীর কলোনিবাসী

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এর আগেও খেলেছে এলাকার কিশোর-তরুণরা; নতুন খেলার সঙ্গী আর মাঠভর্তি দর্শকে প্রতিদিনের খেলার সেই মাঠই আলাদা আমেজে ধরা দিল এক বিকালে।  

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2019, 02:15 PM
Updated : 12 Feb 2019, 03:35 PM

মঙ্গলবার বিকালে পাহাড়তলীর এ মাঠে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের সঙ্গে ক্রিকেটে মেতে ওঠে স্থানীয়রা।

বিকাল ৩টায় ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের আসার কথা সেখানে। তাই আগেই মাঠের কাছে অপেক্ষা করছিলেন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় ক্রিকেটাররা।

বেলা সোয়া ৩টার দিকে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের বহনকারী বাসটি মাঠের কাছে এসে থামে। আগে তারা যান পূর্ব এক্স-ই-এন কলোনিতে।

খেলোয়াড়রা সেখানকার নারীদের কাছে জানতে চান, তাদের সন্তানরা স্কুলে যায় কি না? সবাই ক্রিকেট খেলে কি না?

ওই কলোনির বাসিন্দা নারীরাও ইংল্যান্ডের এই খেলোয়াড়দের কাছে পাল্টা জানতে চান- বাংলাদেশ তাদের কেমন লাগছে? 

পরিদর্শন শেষে মাঠে এসে স্থানীয় কিশোর-তরুণদের সঙ্গে খেলায় মাতেন ইংল্যান্ডের তরুণ ক্রিকেটাররা। খেলার কৌশল নিয়েও কথা হয় তাদের মধ্যে।

এক ইংলিশ ক্রিকেটারের করা বল উড়িয়ে মারেন রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আল আমিন। সেই বল উড়ে গিয়ে পড়ে সীমানা দেয়াল ছোঁয়া দর্শক বসার আসনের কাছে। 

ওই সীমানা দেয়ালের ওপারেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব।

ইংলিশ তরুণ ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বোলিং করেন সিটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী মায়মুনুল বিপ্লব।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “ওরা আমাদের সাথে খেলা নিয়ে কথা বলেছে। যখন কাটার দিচ্ছিলাম, তখন ওরা বলছিল এটা অফ কাটার।”

বোলিং করে নজর কেড়েছেন রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র নাঈম হোসেনও।

আর সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল রেলওয়ে সিগন্যাল কলোনির বাসিন্দা হোসাইনকে ঘিরে। দুটো পা শুকিয়ে যাওয়া হোসাইন কলোনির বাসিন্দা এক বন্ধুর কাঁধে চড়ে মাঠে এসেছিল।

তবে শুধু দর্শক হয়ে থাকেননি হোসাইন। ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন তিনি মাঠে। পরে আবার বন্ধুর কাঁধে চড়ে ফেরার সময় ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়রা ছুটে গিয়ে তার সাথে কথা বলেন এবং সেলফি তোলেন।

এক্স-ই-এন কলোনির আরেক বাসিন্দা আনিসুর রহমান পড়েছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। এখন কাজ করেন একটি টিস্যু কারখানায়।

এদিন ইংল্যান্ড দলের বিপরীতে খেলেছেন তিনিও।

কেমন লাগছে জানতে চাইলে আনিসুর বলেন,  “সময় পেলে এই মাঠে খেলি। খেলার কথা আগে থেকেই জানতাম। আজ ছুটি, তাই চলে এসেছি বিদেশিদের সাথে খেলতে।

“খুব ভালো লেগেছে। একটু পুরো ম্যাচ হলে আরো ভালো হত।”

মাঠের মাঝে ব্যাট-বলের লড়াই চলার পর ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে পাঁচ-ছয়জন লেগে যান ফুটবল প্র্যাকটিসে। স্থানীয় ছেলেদের নিয়ে মাতেন পেনাল্টি শুটে। গোল বাঁচিয়ে তারা দর্শকদের নজর কাড়েন বেশ কয়েকবার।

পরে যুক্তরাজ্য দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা স্থানীয়দের সঙ্গে খেলতে পেরে খুব খুশি।  

এর আগে মাঠ সংলগ্ন পূর্ব এক্স-ই-এন কলোনিতে গিয়ে ইউকে-এইড এবং ইউএনডিপির সহায়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন ইংল্যাণ্ড অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা।

ইউকে-এইড এবং ইউএনডিপির সহায়তায় বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় লাইভলিহুড ইমপ্রুভমেন্ট অব আরবান পোওর কমিউনিটি (এলআইইউপিসি)  প্রকল্পের অধীনে প্রকল্প এলাকায় রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন ও টয়লেট প্রস্তুত, সোলার লাইট বসানো, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা, শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান এবং দক্ষতা ও আয় বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।