শনিবার এমন দুটি বাস থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব।
যার মধ্যে একটি পিকনিকের আয়োজনই করা হয়েছিল ইয়াবা পরিবহনের জন্য। আর অন্য পিকনিকের অংশগ্রহণকারীদের অজান্তে চালক ও সহকারী ইয়াবা নিয়েছিলেন গাড়িতে।
এ দুটি ইয়াবার চালান ধরা পড়ায় আবারও কৌশল পাল্টে অন্য কোনো উপায়ে পাচারকারীরা ইয়াবা পরিবহনের চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
তবে কক্সবাজার থেকে দেশের অন্যান্য জেলায় ইয়াবা পাচার বন্ধে সর্বোচ্চ সর্তকর্তা বজায় রাখা এবং অভিযান আরও জোরদার করার কথা জানিয়েছেন র্যাব ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এর আগে গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশলে ইয়াবা পাচারের চেষ্টা করে মাদক কারবারীরা। যার মধ্যে প্রায় সব কৌশলই ধরা পড়ে র্যাব-পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে।
শনিবার সকালে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রবেশের পথ কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ অংশে ‘নুহা ক্লাসিক’ নামের একটি পিকনিকের বাস আটক করে র্যাব।
ওই বাসে প্রায় ৪০ জন যাত্রী ছিল। বাসটি থেকে উদ্ধার করা হয় দুই লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা।
বাসটির মালিক আতিয়ার রহমান (৫৫) যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানার মোবারকপুর গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। পিকনিকের আয়োজকও তিনি।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক শাফায়াত জামিল ফাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আতিয়ার রহমান বাসের মালিক। তিনি পরিবহনের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি তিনি হজ করে দেশে ফিরেছেন।
“তিনিই পিকনিকের আয়োজক। ৬ ফেব্রুয়ারি যশোর থেকে আত্মীয়-বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। টেকনাফ থেকে বাসের অন্য যাত্রীরা সেইন্টমার্টিন দ্বীপে গেলেও আতিয়ারসহ ছয়জন বাসে থেকে যান।”
তিনি বলেন, সেখান থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সেগুলো নিয়ে ফিরছিলেন আতিয়ার ও তার পাঁচ সঙ্গী। ইয়াবাগুলো লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বাসে মালামাল রাখার স্থানে।
একইদিন সন্ধ্যায় শিকলবাহা এলাকায় পিকনিকের আরেকটি বাস আটক করে র্যাব। যেটি নোয়াখালী থেকে গিয়েছিল কক্সবাজার।
সমুদ্র সৈকতে বাসযাত্রীরা বেড়াতে গেলে বাসের চালক ও সহকারী মিলে বাসে ২০ হাজার ইয়াবা লুকিয়ে রাখেন।
র্যাব কর্মকর্তা শাফায়াত জামিল ফাহিম বলেন, ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত তৎপরতার কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিত্য-নতুন কৌশল বের করছে।
“মানুষ কত নিচে নেমে গেলে কারও পরিবার নিয়ে আনন্দভ্রমণে যাওয়াকে পুঁজি করে এর আড়ালে ইয়াবা পাচার করতে পারে! তবে যতই কৌশল পাল্টাক আমাদের ফাঁকি দিতে পারবে না।
“ইয়াবার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আরো জোরদার হবে।”
এর আগেও গত কয়েক বছরে বারবার কৌশল পাল্টে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে, গ্যাস সিলিন্ডারে ভরে, ল্যাপটপের ব্যাগে করে, জেলের ছদ্মবেশে, পণ্য পরিবহনের আড়ালে কর্ভাড ভ্যানে, মাছ বহনকারী ট্রাকে এবং সবজির ব্যাগে করে পাচারের ঘটনা ধরা পড়ে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, “কোনো একটা কৌশল ধরা পড়ে গেলে আবার নতুন কোনো উপায়ে তারা মাদক পাচারের চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।
“তারা মূলত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি এড়াতে এমন সব কৌশল অবলম্বন করে। পিকনিকের বাসে ইয়াবা পাচারও সেরকম একটি কৌশল। এখন এরকম দুটি ঘটনা ধরা পড়ায় হয়তো তারা অন্য কোনো কৌশলে চেষ্টা করবে।”
চট্টগ্রামের প্রবেশপথগুলোতে নজরদারি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযান আরো জোরদার করা হবে।