বৃহস্পতি ও শুক্রবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার দৌলতপুর দেয়াং মরিয়ম আশ্রম এবং নগরীর পাথরঘাটা গির্জায় এ উৎসবে সারাদেশ থেকে খ্রিস্টভক্তরা যোগ দেবেন।
খ্রিস্ট ধর্মবিশ্বাসের আগমনের ৫০০ বছর পূর্তির দুইদিনের উৎসব নিয়ে চট্টগ্রাম আর্চ ডায়োসিসের পক্ষে বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে বিস্তারিত তুলে ধরেন চট্টগ্রাম আর্চ ডায়োসিসের মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ মজেস কস্তা।
বৃহস্পতিবার প্রথমদিনে দেয়াং মরিয়ম আশ্রমে ছয়শ খ্রিস্টশহীদের সমাধিস্থলে মঙ্গল প্রার্থণার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। পরদিন পাথরঘাটা গির্জায় আন্ত:ধর্মীয় সভার মধ্য দিয়ে দুইদিনের উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫১৮ সালে চট্টগ্রামের দেয়াং পাহাড় এলাকায় পর্তুগিজ বণিকদের হাত ধরে পূর্ববঙ্গে খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা আসেন। ১৫৩৭ সাল থেকে পর্তুগিজ বণিকরা চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
তাদের ধর্মীয় যত্ন নিতে দক্ষিণ ভারতের কোচিন এলাকা থেকে ১৫৯৮ সালে বঙ্গদেশে প্রথম খ্রিস্টান মিশনারীরা আসেন। ১৫৯৯ সালে দেয়াংয়ে এ অঞ্চলের প্রথম গির্জাঘরটি নির্মাণ করেন ফাদার ফ্রান্সেসকো ফার্নান্দেজ। পরের বছর পাথরঘাটা ব্যান্ডেলে ও জামালখান এলাকায় আরও দুইটি গির্জা নির্মাণ করেন।
আর্চবিশপ মজেস কস্তা বলেন, “খ্রিস্ট বিশ্বাসের কারণে আরাকান রাজের নির্দেশে তাকে (ফাদার ফ্রান্সেসকো ফার্নান্দেজ) মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করা হয়। পূর্ববঙ্গের প্রথম খ্রিস্ট শহীদের সমাধির ওপরই চট্টগ্রামের ক্যাথেড্রাল গির্জা। পূর্ববঙ্গে খ্রিস্ট বিশ্বাসের কারণে দেয়াং এলাকায় প্রাণ দিতে হয়েছিল ৬০০ নারী পুরুষকে।
আর্চ বিশপ জানান, খ্রিস্ট বিশ্বাসের যাত্রার ৫০০ বছরে বিকশিত হলেও সংখ্যায় তেমন বাড়েনি, কিন্তু বিকশিত হয়েছে সেবার গুনগত দিক দিয়ে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আছে প্রায় ৩৩ হাজার, সারা দেশে এ সংখ্যা তিন লাখ ৮০ হাজার। এ সম্প্রদায়ের লোকজনই গত পাঁচ শতাব্দি ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে পাঁচ শতাব্দী ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর ও চাঁদপুর জেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম আর্চ ডাইয়োসিস বর্তমানে ১৬টি স্কুল, ১২৫টি গ্রামীণ প্রাইমারি স্কুল, ১৭টি শিক্ষা হোস্টেল, ১৩টি হেলথ সেন্টার ও ডিসপেন্সারি পরিচালনা করছে।
সারাদেশে চার্চ প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৭৪টি ও সেখানে এক লাখ ৩৫ হাজার ৭১১জন শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে।
বিশপ মজেস কস্তা বলেন, ৫০০ বছর আগে খ্রিস্ট ধর্মবিশ্বাস এসেছিল বলে ক্যাথলিক চার্চ বাংলাদেশে সার্বজনীনভাবে সেবাদান করতে পারছে এবং এর মধ্য দিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন জোরদার হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, খ্রিস্ট বিশ্বাসের ঐতিহ্যকে স্মরণ করে সেবামূলক কার্যক্রম উদযাপনের জন্য ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ৫০০ বছর উদযাপনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফাদার গর্ডেন ডায়েস, ফাদার লেনার্ড রিবেরু, ফাদার টেরেন্স রড্রিক্স, কারিতাস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক জেমস গোমেজ।