চিকিৎসকের আত্মহত্যা: স্ত্রীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে প্ররোচনার মামলা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যায়‘প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগে তার স্ত্রীসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2019, 01:32 PM
Updated : 1 Feb 2019, 01:53 PM

আকাশের মা জোবেদা খানম শুক্রবার বিকালে বন্দরনগরীর চান্দগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন বলে ওসি আবুল বাশার জানান।

দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় করা এ মামলায় চিকিৎসকের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার মা শামীম শেলী, বাবা আনিসুল হক চৌধুরী, ছোট বোন সানজিলা হক চৌধুরী আলিশা, যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা প্যাটেল ও ডা. মাহবুবুল আলমকে আসামি করা হয়।

ওসি আবুল বাশার বলেন, “আসামিরা মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে চিকিৎসক আকাশকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয় বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন বাদী।

৩২ বছর বয়সী আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ‘থ্রি ডক্টারস’ নামে মেডিকেল ভর্তির একটি কোচিং সেন্টার চালাতেন তিনি।

তার স্ত্রী মিতু কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস শেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ইন্টার্ন করেন। সেখানেই আকাশের সঙ্গে তার পরিচয়, ২০১৬ সালে বিয়ে। 

বিয়ের পরপরই উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন মিতু। সেখান থেকে ১৩ জানুয়ারি দেশে ফেরেন তিনি। তার দুই সপ্তাহের মাথায় বৃহস্পতিবার ভোরে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসায় ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শরীরে বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন আকাশ।

আত্মহত্যার আগে ফেইসবুকে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক’ ও ‘প্রতারণার’ অভিযোগ করে যান। এর ‘প্রমাণ’ হিসেবে মিতুর সঙ্গে তার ‘বন্ধুদের’ বেশ কিছু ছবিও তিনি ফেইসবুকে তুলে দিয়ে যান।

এর ভিত্তিতে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে নন্দনকানন এলাকায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে মিতুকে আটক করে। আকাশের অভিযোগের বিষয়ে থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এরপর শুক্রবার মিতুকে চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম খায়রুল আমিনের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে আদালত পুলিশের সহকারী কমিশনার কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান।

এর আগে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান বলেন, আকাশের ফেইসবুক পোস্ট এবং তার পরিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিতু কিছু কিছু বিষয় আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। আবার কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছেন।”

পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর বলেন, “বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ নিয়ে আগে থেকেই দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। মিতু দেশের ফেরার পর তা আরও বেড়ে যায়। বুধবার রাতে এ নিয়ে তাদের হাতাহাতিও হয়।”

সেদিন রাতেই মিতুর বাবা এসে আকাশদের বাসা থেকে মেয়েকে নিয়ে যান। ভোরের দিকে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন আকাশ।

আকাশ তার পোস্টে মিতুর যেসব ‘বন্ধুর’ নাম বলে গেছেন, তাদের বিষয়েও পুলিশ তদন্ত করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মিজানুর।

আকাশের মায়ের করা মামলায় মাহবুবুল আলম নামে যে চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে, তিনি কুমিল্লা মেডিকেলে মিতুর ব্যাচমেট ছিলেন। মাহবুবের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা প্যাটেলেরও নাম আকাশের দেওয়া পোস্টে এসেছে।