সাংসদের ‘মারধরের’ প্রতিবাদে চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

সীতাকুণ্ডের সরকারদলীয় সাংসদ দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মালিক-শ্রমিকদের দুইনেতাকে মারধরের অভিযোগ তুলে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের একটি সংগঠন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2019, 08:37 AM
Updated : 13 Jan 2019, 08:42 AM

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার পক্ষ থেকে সোম ও মঙ্গলবার পরিবহন ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেছেন, সেখানে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি, কথা কাটাকাটি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশনের আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মুছা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে কাট্টলীতে সাংসদ দিদারুল আলমের বাসায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অলি আহামদ ও সীতাকুণ্ডের ৮ নম্বর রুটে চলাচলকারী হিউম্যান হ্যলার মালিক সমিতির নেতাদের ডাকা হয়।

“সেখানে সাংসদ দিদারুল আলম মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম ও শ্রমিকনেতা অলি আহামদকে ৮ নম্বর রুটের গাড়ি পরিচালনা ও সমিতির নিয়ন্ত্রণ তার বরাবরে লিখিতভাবে ছেড়ে দিতে বলেন। না হলে প্রতি মাসে তাকে দুই লাখ টাকা করে দিতে হবে বলে জানান।”

লিখিত বক্তব্যে মুছা বলেন, “শ্রমিকদের মতামত ছাড়া সেটা ছাড়া যাবে না মর্মে সাংসদকে জানালে তিনি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলমকে তিনি নিজে বেধড়ক মারধর করেন এবং গালিগালাজ করেন। সাংসদের বাসায় থাকা কিছু যুবকও তাকে মারধর করে।’’

সাংসদ দিদারুল আলম বলছেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে, মারধরের ঘটনা ঘটেনি

সাথে থাকা ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক অলি আহামদ থামানোর চেষ্টা করলে সাংসদ আরও উত্তেজিত হয়ে তাকেও মারধর করেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসময় সাংসদের সাথে থাকা লোকজন অলি আহামদকে মারধর করে এবং তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং মারধরের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ মুছা।

এ ধর্মঘটের আওতায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন রুট থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ পবিহন ধর্মঘট পালন করব। কোথাও কোনো পিকেটিং হবে না।”

এদিকে ওইদিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরে আহত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অলি আহামদ বলেন, “আমরা ওইদিন রাতে উনাকে ফুল দিতে গিয়েছিলাম। উনি তা ছিঁড়ে ফেলে বাজেভাবে কথা বলেন এবং মালিক সমিতির খোরশেদ আলমকে মারধর শুরু করেন। তাকে নিবৃত্ত করতে গেলে আমাকে মারধর করেন তার লোকদেরও মারার জন্য বলেন।”

তিনি বলেন, “আমরা অযথা কাউকে বেকায়দায় ফেলতে চাই না। গাড়ি বন্ধ করা আমাদের পেশা নয়, আমরা এ ঘটনার সম্মানজনক সমাধান চাই।”

তবে সাংসদ দিদারুল আলম উল্টো মালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সীতাকুণ্ডে ৮ নম্বর রুটে চলাচল করা হিউম্যান হলারগুলোর মালিক শ্রমিকদের কাছে জনগণ জিম্মি। ওই রুটে তারা গাড়ি চালকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে।”

তাদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের লোক দাবি করে তিনি বলেন, “ওই টাকা বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার কাজে ব্যবহার করা হয়। আমি তাদের ওইদিন ভাড়া কমানো ও চাঁদা বন্ধ করতে বলেছিলাম।”

এক পর্যায়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে দাবি করে সাংসদ দিদার বলেন, “কোনো মারধরের ঘটনা সেখানে ঘটেনি।”

দিদারুল আলম একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের বড় ভাইয়ের ছেলে দিদার ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ হয়েছিলেন।