আমার আপত্তি ছেলে-মেয়ের একসাথে লেখাপড়ায়: শফী

তার বক্তব্য ‘ভুলভাবে’ প্রচার করা হচ্ছে দাবি করে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী বলেছেন, তিনি নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেননি, আপত্তি করছেন ছেলে-মেয়ের একসঙ্গে লেখাপড়া করায়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2019, 05:50 PM
Updated : 12 Jan 2019, 06:31 PM

এতে ‘পর্দার’ লংঘন হয় দাবি করে শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আমরা চাই এ দেশের নারীরা শিক্ষিত হোক, কারণ মা শিক্ষিত হলে সন্তান সঠিক শিক্ষা পাবে।” 

তবে নারীর শিক্ষার জন্য বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থা নয়, ‘পর্দা’ রক্ষার শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

“যেখানে পরিচালক থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা সকলেই নারী থাকবেন। সে ধরনের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা থাকলে আমরা তাতে উৎসাহিত করব, ইনশাআল্লাহ।”

চট্টগ্রামের হাটহাজারি দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারি মাদ্রাসার পরিচালক শফী শুক্রবার মাদ্রসার ১১৮তম বার্ষিক মাহফিলে মুসল্লিদের চার দফা ওয়াদা করান বলে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়।

আহমদ শফী মেয়েদের স্কুল-কলেজে না দিতে এবং দিলেও সর্বোচ্চ ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়ানোর জন্য ওয়াদা নেন বলে এসব খবরে বলা হয়।

এই খবর প্রকাশের পর দেশব্যাপী তার সমালোচনা শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শনিবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, এটা তার ‘ব্যক্তিগত’ বক্তব্য, রাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক’ ওই বক্তব্য গ্রহণের সুযোগ নেই।

বিবৃতি শাহ আহমদ শফী বলেছেন, তার বক্তব্যের একটি খণ্ডাংশ বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

“বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমাকে নারী বিদ্বেষী ও নারী শিক্ষা বিদ্বেষী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা  দাড় করাচ্ছে।”

নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি মূলত বলতে চেয়েছি, ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের পড়াশুনা করানো উচিৎ হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ যাবতীয় সকল কিছুই রয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সকলেই অবগত যে, উম্মুল মুমিনিন হজরত মা আয়িশা রা. ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি শিক্ষাগ্রহণ না করলে উম্মত অনেক হাদিস থেকে মাহরুম হয়ে যেত।

“তবে এর পাশাপাশি ইসলামের একটি মৌলিক বিধান হচ্ছে পর্দা। নারীদের পর্দার বিষয় ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আমি আমার বক্তব্যে বলতে চেয়েছি, শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে যেন পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা না হয়।  কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে সহশিক্ষা দেয়া হয়, অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে একই সাথে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এতে করে পর্দার লঙ্ঘন হয়। আমি মূলত এই সহশিক্ষা গ্রহণেই মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছি।”

নিজেকে নারী শিক্ষার পক্ষের লোক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তার কওমি মাদ্রসার ছয় বোর্ডের সমন্বিত সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরেন শাহ আহমদ শফী।

এখান থেকে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার সনদ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করেছেন। এতে করে আমাদের দেশের লাখো মাদরাসা ছাত্র ও ছাত্রীরা দাওয়ারে হাদিস পাশ করে মাস্টার্সের সমমান অর্জন করছেন।

“যে সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে হাজার হাজার নারী রাষ্ট্র স্বীকৃত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত বলে পরিগণিত হচ্ছে, সেই বোর্ডের প্রধান হয়ে আমি কীভাবে নারী শিক্ষার বিরোধী হলাম, তা বোধগম্য নয়।”

তবে নারীর শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের মতো করে চান হেফাজত আমির।

তাহলে এই শিক্ষায় সহায়তা করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “আমি বা আমরা নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে নই, তবে নারীর জন্য নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয় আমরা আগেও সতর্ক করেছি, এখনো করছি। আমরা চাই, নারীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক, তবে সেটা অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশে থেকে এবং ইসলামের মৌলিক বিধানকে লংঘন না করে। শিক্ষা গ্রহণ অবশ্যই জরুরি, তবে সেটা গ্রহণের জন্য আমরা আমাদের কন্যাদের অনিরাপদ পরিবেশে পাঠাতে পারি না।

“আমরা যেমন নিরাপদ পরিবেশে রেখে নারীদের সর্বোচ্চ শিক্ষায় (দাওরায়ে হাদিস সমমান মাস্টার্স) শিক্ষিত করে যাচ্ছি, আপনারাও সেভাবে নিরাপদ ব্যবস্থা করে শিক্ষা দান করুন।”

পুরনো খবর