কথাসাহিত্যিক রণেশ দাশগুপ্তের বই পড়া নিয়ে প্রতিযোগিতার এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি জাতিগত ও নারী-পুরুষ বৈষম্যের বীজ’ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখির জন্য প্রশংসিত মুশতারি শফী বলেন, “পাঠ্যপুস্তকের ঝকঝকে মলাটের ভেতরে বীভৎস মৌলবাদী পরিকল্পনায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্প্রদায়গত, জাতিগত এবং নারী-পুরুষের বৈষম্য।”
দুই বছর আগে শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের পর প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক ভাবধারার অনেক লেখা অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
পাঠ্যপুস্তকে এই পরিবর্তনের জন্য কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের পরামর্শ আমলে নেওয়ার কথা সে সময়ও বলা হয়েছিল।
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আলোচনার কেন্দ্রে আসা হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফী বিভিন্ন সময় নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য সমালোচিত হয়েছেন।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি মুশতারি শফী বলেন, “হেফাজতে ইসলামের প্রেসক্রিপশন মেনে আমাদের স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে সরকার রণেশ দাশগুপ্তের মতো মানবতাবাদী দার্শনিক ও আজন্ম বিপ্লবীর লেখা সরিয়ে নিয়েছে।
“এখন পাঠ্যপুস্তকে বাংলাদেশের কথা যতটা না প্রতিফলিত হয়, তার চেয়ে পাকিস্তানপন্থি চিন্তা-চেতনার কথা বেশি আছে। এক ভয়ানক সাম্প্রদায়িক বিষে আক্রান্ত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।”
চট্টগ্রামে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্যোগে ‘রণেশ দাশগুপ্ত গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা’র লিখিত পরীক্ষা শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি।
মুজতারি শফী বলেন, “কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রণেশ দাশগুপ্তসহ প্রগতিশীল চিন্তাবিদ-লেখকদের সম্পর্কে অন্ধকারে রাখতেই পাঠ্যপুস্তক বদলানো হয়েছিল।
“এই অবস্থায় উদীচী যেহেতু অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সংগ্রাম করে, সুতরাং উদীচী বসে থাকতে পারে না। আমরা রণেশ দাশগুপ্তদের আবারও শিক্ষার্থীদের সামনে আনার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্যই আয়োজন করা হয়েছে গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা।”
শিক্ষার্থীদের ‘গোঁজামিলে ভরা’ পাঠ্যপুস্তকের বাইরে রণেশ দাশগুপ্তের মতো মানবতাবাদী লেখকদের বই পড়ার আহ্বান জানান মুশতারি শফী।
শনিবার বিকেলে নগরীর কদম মোবারক এম ওয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ-সভাপতি ডা. চন্দন দাশ ও বিধান বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা, সহ-সাধারণ সম্পাদক জয় সেন ও মনীষ মিত্ উপস্থিত ছিলেন।