আহমদ শফীর বক্তব্য আমলে নিচ্ছেন না নওফেল

মেয়েদের লেখাপড়া না করানোর বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর রাষ্ট্রীয় নীতি-বিরুদ্ধ বক্তব্য তার ‘ব্যক্তিগত’ বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2019, 06:32 AM
Updated : 12 Jan 2019, 06:32 AM

রাষ্ট্রের নীতির ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক’ ওই বক্তব্য গ্রহণের সুযোগ নেই বলে মত দিয়েছেন তিনি।

শনিবার সকালে নগরীর চশমা হিলে পৈত্রিক বাড়িতে চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটাহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় বার্ষিক মাহফিলে মাদ্রাসার পরিচালক আহমদ শফী মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর ওয়াদা নেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর।

কওমি মাদ্রাসর ছয় বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শফীর ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া নতুন শিক্ষা উপমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।

নওফেল বলেন, “যিনি এ মন্তব্যটা করেছেন তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষানীতি প্রণয়ন বা শিক্ষা ব্যবস্থাপনা পরিচালনা বা শিক্ষাখাতের কোনো নির্বাহী দায়িত্বে নেই।

“এ ধরনের মন্তব্য, যে কোনো নাগরিক যেহেতু বাক স্বাধীনতা আছে- তার মনের ভাবনা বহিঃপ্রকাশ করবার…। তিনিও দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজের বিশ্লেষণ সেটা দিয়েছেন।”

শাহ আহমদ শফী

নওফেল বলেন, “এটা আমাদের রাষ্ট্রনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এবং শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথেই বলব, আমরা যারা বাক স্বাধীনতার কথা বলছি, মনে রাখতে হবে আমাদের সংবিধানে সকলের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। আমরা যেন বৈষম্যমূলক কোনো মন্তব্য না করি।

“তিনি ব্যক্তিগত অভিমত দিয়েছেন। তার অভিমত যে রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রতিফলন ঘটবে এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই। এরকম অনেকেই নিজস্ব অভিমত দেন।”

পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ এবং বিভিন্ন লেখকের লেখা বাদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নওফেল বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করে। এবং বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে আমাদের বাধ্য করেছে।

“সংবিধান অনুসারে অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ কারিকুলাম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে মানের উন্নয়ন ও ধর্মীয় শিক্ষার যে বিশেষায়িত ব্যবস্থাপনা আছে সেখানে সার্বিক মানের উন্নয়ন হলে সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে না।

“পড়াশোনার মধ্যে সাম্প্রদায়িকীকরণ যদি করা হয় অদূর ভবিষ্যতে তা আমাদের জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়াবে, এটা আমরা সকলেই বিশ্বাস করি। যারা এটার সাথে (পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন) জড়িত ছিলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”

শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “আগামীতে আমরা প্রথম থেকেই সর্তক থাকব। যাতে এ ধরনের কার্যকলাপ না ঘটে। তখন আগে থেকে জানা ছিল না, তবুও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা আগে থেকে জানি, অগ্রিম ব্যবস্থা নেব।”

সভায় সাংবাদিকরা চট্টগ্রামের সরকারি স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি, বেসরকারি স্কুলে অতিরিক্ত বেতন-ফি আদায়, স্কুল ব্যবস্থাপনায় সাংসদদের যুক্ত থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় তোলেন চট্টগ্রামের সন্তান নওফেলের কাছে।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন ইতোপূর্বে একটি প্রস্তাব করেছিল চট্টগ্রামে বিদ্যমান সরকারি স্কুলগুলোর অবকাঠামো ও ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে দ্বিতীয় শিফট চালু করা। পাশাপাশি কিছু এলাকায় পুরনো ও প্রতিষ্ঠিত স্কুলকে সরকারি করা।

“এটা আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের না দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিয়ে স্কুল পরিচালনা করা। এতে জনপ্রতিনিধিদের ওপর মানুষের চাপ ও ব্যবস্থাপনার যে দায় থাকে তাতে ভারসাম্য আনা যাবে।”

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন, বেদারুল আলম চৌধুরী, শেখ শফিউল আজম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ উপস্থিত ছিলেন।