হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান মাইজভাণ্ডারি: পেয়ারুল

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ জোটের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি 'হত্যার উদ্দেশ্যে' তার উপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2018, 01:52 PM
Updated : 11 Dec 2018, 01:52 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পরপরই ফটিকছড়িতে সংঘাতের পরদিন মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।

এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল থেকে প্রার্থী করা হয়েছে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারিকে। এক সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাইজভাণ্ডারি পরে বিএনপিতেও গিয়েছেলেন। এখন আলাদা দল গঠন করে রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি।

পেয়ারুল এই আসনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে। গতবার এই আসন থেকে নির্বাচিত হন মাইজভাণ্ডারি। এবার মনোনয়ন না পেয়ে আপেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন পেয়ারুল।

সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর পেয়ারুল ও মাইজভাণ্ডারি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হক আহত হন।

ওই হামলার প্রতিবাদে ‘ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সদস্য পেয়ারুল।

তিনি বলেন, “নাজিম উদ্দিন মুহুরী এবং আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এ হামলা চালিয়েছেন।

“শীর্ষ সন্ত্রাসী তৈয়বের নেতৃত্বে মুখোশধারীরা গুলি ছোড়ে। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সন্ত্রাসীরা নাজিমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে। তারা আমাকেও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে।”

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ী হবেন দাবি করে পেয়ারুল বলেন, “বিএনপি প্রার্থী নিকটতম হবেন। সবচেয়ে কম ভোট পাবেন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।”

দলের ‘উপর থেকে গ্রিন সিগন্যাল আছে’ বলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি; যদিও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের নেতা পেয়ারুল বলেন, “উনি (নজিবুল বশর) আওয়ামী লীগের যতটা ক্ষতি করেছে, জামায়াত-শিবিরও অতটা করেনি। ফটিকছড়িতে উনি আওয়ামী লীগের কবর রচনা করবেন। এত কিছুর পরও উনি প্রার্থী থাকলে আমাদের দল ধ্বংস হয়ে যাবে।”

নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী, মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যা করিয়েছেন বলে দাবি করেন পেয়ারুল।

তিনি বলেন, “উনি ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করেন। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করান। আর তিন হাজার হিন্দুকে এলাকা ছাড়া করান।”

সংবাদ সম্মেলনে নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, “নজিবুল বশর ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে বিজয়ী হন। আবার ১৯৯৬ সালে বিএনপির হয়ে জয়ী হয়ে দলের নেতাকর্মী যারা রক্ত দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেছিল তাদের ওপরই প্রতিশোধ নেন।

“২০০১-০৬ সালে ফটিকছড়িতে ১৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে খুন হন। ২০০৮ সালে তিনি তরিকত ফেডারেশন গঠন করেন।”

নাজিম বলেন, “২০১৪ সালে নেত্রীর দিকে তাকিয়ে শত কষ্ট সয়ে আমরা উনার জন্য কাজ করি। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ফটিকছড়িবাসীর দাবি না মেনে উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করেছেন।

“সংগঠনকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কটূক্তি করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় উনাকে ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে, সোমবার রাতে নানুপুর বাজারে হামলার বর্ণনা দেন নাজিম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুল হক, সুয়াবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তালেব, ভক্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুল আজম, আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমান স্বপন, শফিউল আলম, আমানুল্লাহ চৌধুরী ও সালামত উল্লাহ চৌধুরী।

পেয়ারুলের অভিযোগের বিষয়ে মাইজভাণ্ডারির তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে সংঘাতের পর সোমবার তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল, যার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

আওয়ামী লীগের সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করতে চান জানিয়ে মাইজভাণ্ডারি বলেন, "পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা ছিল, কিন্তু করেননি। আমার কাজ সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। নৌকার লোকদের সাথে মিলেমিশে নির্বাচন করা।"