হালদায় মরল আরেকটি শুশুক

চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে নিয়মিত বিরতিতে ভেসে উঠছে মরা শুশুক।  

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2018, 11:02 AM
Updated : 14 Nov 2018, 11:02 AM

বুধবার হালদা নদীর রাউজান উপজেলার আজিমেরঘাট সংলগ্ন অংশ থেকে স্থানীয়রা মৃত একটি শুশুক উদ্ধার করে।

উদ্ধারকারীদের একজন এস এম মুজিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নদীতে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে আমরা ডলফিনটি উদ্ধার করি। মনে হয় এটি কয়েকদিন আগেই মারা গেছে। এটিতে পচন ধরেছে।”

হালদা বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডলফিনটি কয়েকদিন আগেই মারা গেছে। মুখে আঘাত পেয়ে এটির মৃত্যু হয়।

“হালদা নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধের ব্লক ও বালি আনার জন্য বড় বড় নৌযান নদীতে চলাচল করছে। এসব নৌযানের আঘাতেই ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছি।”

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি আগামী জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাঁধের কাজে ব্যবহৃত বড় নৌযানগুলো  নদীতে চলাচল বন্ধ রাখতে। তা না হলে নদীতে আরও ডলফিন এবং মা মাছ মারা যাবে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে হালদায় ড্রেজারের আঘাতে গাঙ্গেয় ডলফিন প্রজাতির এই শুশুকগুলোর মৃত্যু শুরু হয়।

গত এক বছরে হালদায় মোট ১৯টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া।

গত বছরের শেষ তিন মাসে মারা যায় মোট ১৬টি ডলফিন।  ওই বছরের শেষ ও  চলতি বছরের  জানুয়ারিতে  চারটি মৃত ডলফিন ভেসে উঠে হালদা নদী ও সংলগ্ন খালে।  

সেসময় মৎসজীবী ও সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করে বলেন, নিয়মিত ডলফিন মারা যাওয়ার এ চিত্র ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’।

পরে সরকার নদীতে ড্রেজার চলাচল নিষিদ্ধ করে এবং স্থানীয় প্রশাসন চলতি বছরের এপ্রিলে নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ করে দেয়।

হালদা নদীতে যে ডলফিনের দেখা মেলে, তা গাঙ্গেয় ডলফিন প্রজাতির। ইংরেজিতে একে বলা হয় Ganges River Dolphin; এর বৈজ্ঞানিক নাম Platanista gangetica । স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় হুতুম বা ‍শুশুক।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে বিপন্ন হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুসারে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

এই প্রজাতির ডলফিন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের নদীতে দেখা যায়। এরমধ্যে ভারতের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র, বাংলাদেশের পদ্মা, সুন্দরবনের আশেপাশের নদী এবং চট্টগ্রামের হালদা ও কর্ণফুলী এর  বিচরণ ক্ষেত্র।

গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, হালদায় ২০০টির মতো ডলফিন আছে।

হালদা পাড়ের বাসিন্দা এবং গড়দুয়ারা ড. শহীদুল্লাহ একাডেমির প্রধান শিক্ষক শিমুল মহাজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শৈশবে নদীতে নিয়মিত ডলফিন দেখতেন তারা, এখন খুব কম দেখা যায়।“ডলফিন বাঁচার উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে না। নদীতে ড্রেজার চলে আর মাছ ধরার জন্য কেউ কেউ গোপনে বিষও প্রয়োগ করে।”