পুলিশকে মিথ্যা নাম দিল একজন, তাতে সাজার পর কারাবাসে আরেকজন

১৪ বছর আগে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর গ্রেপ্তার হয়ে নাম বদলে চাচাত ভাইয়ের নাম-পরিচয় দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি, তাতে ২২ বছরের সাজার পর চার মাস কারাবাস করতে হয়েছে চট্টগ্রামের এক বাসিন্দাকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2018, 02:08 PM
Updated : 28 Jan 2019, 02:31 PM

অমর দাশ নামের ওই ব্যক্তি রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ সময় সদরঘাট থানা পুলিশ ফুল দিয়ে বরণ করে নেন অমরকে।

কারগার থেকে ছাড়া পেয়ে অমর ধন্যবাদ দিয়েছেন সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিনকে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কারাগারে চার মাস আটক থাকাকালে আর্থিকভাবে তাকে সহায়তা করেছে পুলিশ। কারাগার থেকে ছাড়া পেতে উচ্চ আদালতের আদেশ নেওয়া পর্যন্ত সব কাজে সহায়তা করেছেন ওসি নেজাম উদ্দিন।

২০০৪ সালের ১৬ অগাস্ট র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় স্বপন দাশ ও তার সহযোগীসহ পাঁচজনকে। তবে সে সময় নাম-পরিচয় বদলে নিজেকে চাচাত ভাই অমর দাশ হিসেবে পরিচয় দেন স্বপন। তিন বছরের মাথায় জামিনে ছাড়াও পেয়ে যান তিনি।

এ মামলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে পাঁচ আসামিকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।

আদালতের পরোয়ানা অনুযায়ী, অমরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তারা জানতে পারে, যে আসামিকে ধরেছে তিনি আগে কখনও গ্রেপ্তার হননি। তার চাচাত ভাই স্বপন দাশ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৪ বছর আগে।

সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, ২০০৭ সালে স্বপন জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পায়। গত বছরের ১৬ অক্টোবর আদালত অস্ত্র আইনে ১৭ ও বিস্ফোররক আইনে পাঁচ বছর করে মোট ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয় পাঁচ আসামিকে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

পরোয়ানা মূলে গত ৫ জুলাই অমর দাশকে গ্রেপ্তার করে সদরঘাট থানা পুলিশ। এরপর বেরিয়ে আসে আসল কাহিনী।

সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, ২০০৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়াদের মতিন নামে একজন এখন কারাগারে বন্দি আছেন। আদালতের আদেশে অমরের মুখোমুখি করে মতিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

“তখন মতিন জানিয়েছে, তাদের সাথে গ্রেপ্তার হওয়া অমর ও বর্তমানে গ্রেপ্তার ব্যক্তি এক নয়। আগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির ডান পায়ে গুলির জখম ছিল।

“এ তথ্য নিশ্চিত হয়ে আমরা পুনরায় অভিযান শুরু করি এবং গত ১৩ অগাস্ট নগরীর কদমতলী এলাকা থেকে মূল আসামি স্বপন দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বপন পুলিশের কাছে পরিচয় গোপনের বিষয়টি স্বীকার করে।”

ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে নিয়ে বিষয়টি তিনি আদালতকে অবহিত করেন। আদালতের অনুমতি নিয়েই এর তদন্ত শুরু করেছিলেন। কারাগারে গিয়ে ২০০৪ সালের নথিপত্র যাচাই করেন। বর্তমানে কারাগারে থাকা হাজতি ও কয়েদিদের ছবি থাকলেও আগে তা রাখা হত না। সে মসয় ছবি ছাড়া বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপসহ অন্যান্য বিষয়গুলো সংরক্ষণ করত।

“তদন্তে কারাগারে সংরক্ষিত শনাক্তকরণ চিহ্নের সাথে পরবর্তীতে গ্রেপ্তার অমরের কোনো মিল নেই।”

স্বপন দাশের ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে জখমের চিহ্নটি এখনও আছে বলে জানিয়েছেন ওসি নেজাম।

নাম পরিবর্তনের ঘটনায় অমর উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন করেন।

উচ্চ আদালতের বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও মো. বদরুজ্জামানের বেঞ্চ গত ২৮ অক্টোবর অমরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্বপনকে অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দেন। 

দুপুরে কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওসি নেজাম উদ্দিন ও সদরঘাট থানা পুলিশ অমরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

অমর জানান, তার বাসা পতেঙ্গা মুসলিমাবাদ এলাকায়। আর কাকাত ভাই স্বপনের বাসা সদরঘাট থানার সাহেবপাড়া এলাকায়। একটি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন তিনি। আর তার স্ত্রী স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত।

তিনি বলেন, “কারাগারে থাকার সময় ওসি সাহেব আমার পরিবার চলার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। আর উচ্চ আদালত থেকে ছাড়া পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তাও করেছেন।”