গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নে দুর্ভোগে চট্টগ্রাম

এলএনজি টার্মিনালে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরবাসীর ভোগান্তির পাশাপাশি বন্ধ করা হয়েছে সার কারখানা ও দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2018, 11:50 AM
Updated : 6 Nov 2018, 11:50 AM

রোববার থেকে বন্দর নগরীর বাসাবাড়িতে দিনের বেলায় গ্যাসের চুলায় রান্না করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। বিকালে ও রাতে গ্যাস সরবরাহ থাকলেও সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় চুলা জ্বলছে না।

নগরীর দেওয়ান বাজার এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী তাসলিমা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি গ্যাস নেই।

“গত কয়েক মাস এরকম সমস্যা হয়নি। হঠাৎ কী হলো সেটা বুঝতেও পারছিলাম না। পরে তিনটার দিকে চুলায় গ্যাস আসে। কিন্তু চাপ ছিল খুব কম।”

সোমবারও বহদ্দারহাট, চকবাজার, জামালখান, পাথরঘাটা, সদরঘাট, হালিশহর, আসকার দিঘীর পাড়, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সঙ্কট ছিল।

ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বাসিন্দা এলিজাবেথ ইউজিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাস না থাকায় হোটেলের খাবার খেতে হচ্ছে। কিন্তু শিশুদের খাবার রান্না করতে খুব সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।”

পাইপালাইনে গ্যাস সঙ্কট শুরুর পর থেকে বাজারে গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) থেকে সোমবার জানানো হয়, ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ কমে গেছে। ফলে প্রতিদিন ১৫ কোটি ঘটফুট গ্যাস কম পাচ্ছে তিতাস, যা স্বাভাবিক সরবরাহের প্রায় ৯ শতাংশ।

জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও সার কারখানাতেও সরবরাহ কমাতে হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।

কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমদ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ কারণে সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) এবং তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

এর মধ্যে আছে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট এবং শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট রিসাইকেল ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্ল্যান্ট।

বাসা-বাড়িতে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বৃদ্ধির আশায় আছে তারা।

কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হত।

শনিবার এই টার্মিনালের পানির তলদেশে থাকা হাইড্রোলিক বাল্ব নষ্ট হওয়ায় এখান থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহও কমে যায়।

মধ্য অগাস্টে এলএনজি টার্মিনাল চালু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছিল। চালু হয়েছিল বন্ধ থাকা সার কারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

খায়েজ মজুমদার বলেন, এলএনজি টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রামে ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত।

“রোববার তা কমে ২০০ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। বাসা-বাড়ির সংকট কাটাতে জাতীয় গ্রিড থেকে কিছু বেশি সরবরাহের অপেক্ষায় আছি।”

কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী অনুপম দত্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “আমরা যতটুকু পাচ্ছি তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। এলএনজি টার্মিনালে ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে।”

এলএনজি টার্মিনালের ত্রুটির বিষয়ে গতকাল যোগাযোগ করা হলেও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে এই ত্রুটি সারাতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কেজিডিসিএল এমডি খায়েজ মজুমদার।

জিটিসিএল ও পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড, শেভরন, সিলেট গ্যাস ফিল্ড, তাল্লো গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে অগাস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে আরও ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস গ্রিডে আসছিল।

সারা দেশে সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও তা কখনোই পূরণ করা যায় না।