কফিনবন্দি বাচ্চু ফিরলেন ‘ঘুম ভাঙা শহরে’

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র আইয়ুব বাচ্চু তার জন্মশহর চট্টগ্রামে ফিরেছেন কফিনবন্দি হয়ে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2018, 07:40 AM
Updated : 20 Oct 2018, 07:40 AM

শনিবার বেলা ১১টায় ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে এলআরবির লিড গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

শাহ আমানতের ব্যবস্থাপক সারোয়ার ই জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এই শিল্পীর মরদেহ গ্রহণ করেন।

বিমানবন্দর থেকে আইয়ুব বাচ্চুর কফিন নেওয়া হয় বন্দরনগরীর পূর্ব মাদারবাড়িতে তার নানা বাড়িতে। কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা ছিল একটি কালো ব্যানারে। তাতে লেখা ছিল ‘কিংবদন্তির মৃত্যু নেই’।

বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অঙ্গনে ‘গিটারের জাদুকর’ হিসেবে খ্যাত আইয়ুব বাচ্চু গত বৃহস্পতিবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।

বাচ্চু ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী। চার দশক বাংলাদেশের তরুণদের গিটারের মূর্ছনায় মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া আইয়ুব বাচ্চুর শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় নানা বাড়িতেই কেটেছে। তাকে শেষবার দেখতে সেই বাড়িতেই ভিড় করেছেন বন্ধু, স্বাজন, আত্মীয় আর ভক্তরা। 

তাদের মনে ফিরে ফিরে আসছে বাচ্চুর গাওয়া গানের কথা ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে/মায়াবী সন্ধ্যা/চাঁদ জাগা এক রাতে,/একটি কিশোর ছেলে/একাকী স্বপ্ন দেখে/হাসি আর গানে/সুখের ছবি আঁকে।/আহা কি যে সুখ!’

চট্টগ্রামে কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে বাচ্চু গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ডদল। শুরুতে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নাম দিলেও পরে বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’।

পাড়া মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে চলত তাদের পরিবেশনা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন হোটেল এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে বন্ধুদের নিয়ে গান গাইতেন বাচ্চু।

পেশাদার ব্যান্ডশিল্পী হিসেবে বচ্চুর ক্যারিয়ার শুরু ১৯৭৮ সালে। ব্যান্ড দলে ‘ফিলিংস’ এর সঙ্গে সে সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পারফর্ম করতেন তিনি। দুই বছরের মাথায় যোগ দেন জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সোলসে।

টানা দশ বছর সোলসের লিড গিটার বাজানোর পর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। শুরুতে এলআরবির পুরো নামটি ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, পরে তা বদলে নাম হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।

আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে ‘ফেরারী এই মনটা আমার’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘একদিন ঘুমভাঙা শহরে’, ‘চল বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’র মত বহু গান শ্রোতাদের হৃদয়ে বাজবে বহুদিন।

সোলস ব্যান্ডে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গী সুব্রত বড়ুয়া রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল ৩টায় কফিন নিয়ে যাওয়া হবে চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে এক দফা জানাজা হবে, সবাই শ্রদ্ধা জানাবেন এই শিল্পীর প্রতি।

এরপর নগরীর চৈতন্য গলিতে মায়ের কবরের পাশে শায়িত হবেন আজীবন গিটার আর গান নিয়ে মেতে থাকা আইয়ুব বাচ্চু। চৈতন্য গলির বাইশ মহল্লা কবরস্থানে ইতোমধ্যে দাফনের সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।