চট্টগ্রামের পূজায় ‘নিরাপদ সড়কের আন্দোলন’

চট্টগ্রামে বড় মণ্ডপগুলোতে নানা ধারণাভিত্তিক বর্ণিল আয়োজনের পাশাপাশি সনাতনী পদ্ধতির পূজার আয়োজনও নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2018, 07:51 AM
Updated : 18 Oct 2018, 08:08 AM

পৌরাণিক অসুর বধের কাহিনী থেকে শুরু করে হালের নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনসহ অনেক ধারণা ঠাঁই পেয়েছে এই আয়োজনে।

বিপরীতে সনাতনী ধারায় বড় আকারের প্রতিমা আর আলোকসজ্জায় সেজেছে অনেক মণ্ডপ।

তবে থিমভিত্তিক পূজা মণ্ডপগুলোতে শব্দ-আলো আর মঞ্চ সজ্জার সঙ্গে আলাদা প্রতিমা গড়ে পূজা নিবেদন নজরে পড়েছে বেশ কয়েক জায়গায়।

সোমবার থেকে নগরীর মণ্ডপগুলোতে আগ্রহী দর্শনার্থীরা ভিড় করতে শুরু করে। তবে বুধবার রাতেও কয়েকটি বড় মণ্ডপে মঞ্চসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ চলতে দেখা গেছে।

যেসব জায়গায় থিমভিত্তিক পূজার আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে বিকেল থেকেই শুরু হচ্ছে থিমের উপস্থাপনা। রাত বাড়ার সাথে বাড়ছে ভিড়ও।

নগরীর আগ্রাবাদ, হাজারী গলি, দক্ষিণ নালা পাড়া, সতীশ বাবু লেইনসহ কয়েকটি মণ্ডপে পূজা দেখার অপেক্ষায় ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষদের।

আগ্রাবাদ একতা সংঘের পূজার আয়োজন আগের বছরগুলোর মতই আকৃষ্ট করেছে নগরবাসীকে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে দুর্গমাসুরকে দমনে ব্রহ্মা ও পার্বতীর পরামর্শে দেবতারা আহ্বান জানান দেবী দুর্গাকে। পরে যুদ্ধে পরাজিত হয় দুর্গমাসুর।

পূজা দেখতে আসা তাপস দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বরাবরের মতই এখানকার আলোকসজ্জা অসাধারণ হয়েছে। পাশাপাশি থিমের উপস্থাপনও সুন্দর।”

থিমভিত্তিক পূজার মধ্যে আলোচিত একটি হলো নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে উপজীব্য করে গোসাইলডাঙ্গা বারোয়ারি পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজন।

নিহত ছাত্রের মায়ের আহাজারি, শিক্ষার্থীদের মিছিল-স্লোগান এবং কারার ওই লৌহ কপাট গানের আবহ সংগীতে সাজানো হয়েছে থিমটি।

তবে অসুর বধের থিমের আদলে সাজানো হলেও নগরীর সতীশ বাবু লেইনের পূজা দর্শনার্থীদের প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি।

সনাতনী প্রতিমায় নজর কেড়েছে নগরীর দেওয়ানজী পুকুর লেইন, চেরাগী পাহাড় মোড়, কুসুম কুমারী স্কুল ও জেএমসেন হলের পূজা।

এছাড়া নগরীর গোয়ালপাড়া, পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গিবাজার, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর হিন্দু পাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ কাট্টলী, বন্দর, আসকার দিঘীর পাড়সহ বিভিন্ন এলাকার মন্দির ও পাড়ার মন্ডপে দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

ভাই-বোনদের নিয়ে পূজা দেখতে বের হওয়া কলেজ শিক্ষার্থী শ্রেয়সী তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার বন্ধুদের সাথে ঘুরে ‍ঘুরে পূজা দেখেছি। আজ বেরিয়েছি সব ভাই-বোনদের নিয়ে।

“মণ্ডপে মণ্ডপে গান-বাজনা চলছে। ‍দুয়েক জায়গায় অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। পা ব্যথা হয়ে গেছে। তবুও পূজা দেখতে অনেক মজা পাচ্ছি।”

নগরীর মণ্ডপগুলোর মধ্যে হাজারী গলির পূজার থিম ‘মুখোশ’ দেখতে ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি।

হাজারী গলির কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, “প্রতিবারই ভিন্ন ধরণের আয়োজন করার লক্ষ্য থাকে আমাদের। এবার মুখোশের আড়ালে থাকা অসুরের প্রকৃত রূপ উন্মোচনের থিম নিয়েই সাজানো হয়েছে পূজা। নগরবাসী এটা খুব পছন্দ করেছে।” 

বুধবার রাতে সেই মণ্ডপে এসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে অনেকেই মণ্ডপগুলোতে যাচ্ছেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে।