ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রোববার রাত ২টার দিকে আকবর শাহ থানাধীন পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় পাহাড় ধসে ঘরের উপর পড়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়।
তার আগে রাত ১টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন রহমান নগর এলাকায় দেয়াল ধসে নিহত হন আরেকজন।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে ফিরোজ শাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল এলাকার বরিশাল ঘোনায় পাহাড়ের মাটি দুটি কাঁচা ঘরের ওপর ধসে পড়লে তিনজন মাটিচাপা পড়েন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু করেন। ভোরের দিকে মাটি সরিয়ে তারা বের করেন তিনজনের লাশ।
নিহত তিনজন হলেন- স্থানীয় নূর মোহাম্মদের স্ত্রী নূরজাহান (৪৫), তাদের আড়াই বছরের মেয়ে ফজরুন্নেছা ওরফে নুর বানু এবং নূরজাহানের মা বিবি জোহরা (৬৫)।
ফিরোজ শাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল এলাকায় ময়লার গাড়ি চালান নূর মোহাম্মদ। তার আরও দুটি মেয়ে রয়েছে। ওই বাসায় তারা সাতজন থাকতেন।
সকালে ঘটনাস্থলে নূর মোহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, টানা বৃষ্টি চলায় বিপদ বুঝে তিনি রাতে ঘরের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিলেন। সব শেষে স্ত্রী-শাশুড়িকে সরিয়ে নেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু তার আগেই পাহাড় থেকে মাটির স্তর নেমে আসে।
পাঁচলাইশের ঘটনায় নিহত নুরুন্নবী নান্টু (৪৫) পেশায় ছিলেন রিকশাচালক, বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। চট্টগ্রামে রহমান নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার পাশে একটি ভাড়া ঘরে থাকতেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে পাহাড়ের ঢালে থাকা একটি গাছের শিকড় উপড়ে গেলে সেটি সীমানা দেয়ালের ওপর পড়ে। তখন ওই দেয়াল ও গাছ পাশের ঘর ভঙে ভেতরে গিয়ে ঢোকে।
গুরুতর আহত নান্টুকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাহাড় ও দেয়াল ধসে নিহত চারজনের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
“এছাড়া ওই এলাকায় অবৈধভাবে যারা পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল হক জসিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফিরোজ শাহ কলোনির বরিশাল ঘোনার ওই পাহাড়টির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে সেটি এখন ফয়’স লেক পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপের অধীনে আছে।
ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরেই চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছিল। ঝুঁকি বিবেচনায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংও করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেখান থেকে সরেনি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাহাড়ের পাদদেশের বাসিন্দাদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযানও পরিচালনা করেছেন।
“কিন্তু বসতি স্থাপনকারীরা ঝুঁকি জেনেও সেখান থেকে সরেনি। নূর মোহাম্মদের পরিবারের অপর চার সদস্য রাতে সরলেও বাকিরা মালামাল নেওয়ার জন্য আবার ফিরে এসে পাহাড় ধসে প্রাণ হারায়।”
“টানা বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তাদের উঠে যেতে বলা হলেও তারা কান দেয়নি। তাদের স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। অনেকে গেলেও রাতে আবার ঘরে ফিরে গেছে।”
পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল এলাকায় চারশ পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসরবাস করে বলে তথ্য দেন এই জনপ্রতিনিধি।
তিনি বলেন, তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার পর অবৈধভাবে বসবাসকারীদের অনেকেই এখন অন্য জায়গায় সরে গেছে।