চট্টগ্রামে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান, দুই লাশ উদ্ধার

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের একটি আস্তানা ঘিরে অভিযানে ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের পর ভেতর থেকে দুইজনের ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

চট্টগ্রাম ব্যুরোও ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2018, 03:34 AM
Updated : 5 Oct 2018, 01:44 PM

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়ে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ‘চট্টগ্রাম আদালত ভবনে’ নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে খবর পেয়ে তারা এ অভিযান চালান।

বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে প্রায় আট ঘণ্টার অভিযান শেষে জোরারগঞ্জ থানার উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামে একতলা ওই টিনশেড বাড়ি থেকে একটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি অবিস্ফোরিত আইইডি, তিনটি পিস্তল, গোলাবারুদ এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে র‌্যাব।

‘চৌধুরী ম্যানশন’ নামে ওই বাড়ির মালিক ও কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলেও মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন।

অভিযানে গোলাগুলির কারণে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে ওই বাড়িতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটনার পর গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিয়ন্ত্রিতভাবে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়। 

সকালে ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা এসে বাড়ির ভেতরে ও বাইরে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে। তখনই দুইজন পুরুষের ছিন্নভিন্ন লাশ পাওয়া যায় বলে অভিযান শেষে এক ব্রিফিংয়ে জানান মুফতি মাহমুদ খান।    

বিএসআরএম স্টিল মিল ও বারইয়ার হাঁটের মাঝামাঝি এলাকায় মহাসড়কের পাশে ‘চৌধুরী ম্যানশন’ নামে ওই বাড়ির মালিক মাজহারুল হক চৌধুরী ঠিকাদারী ব্যবসা করেন, থাকেন পাশের এলাকায় এক বাড়িতে।

সোহেল নামের এক লোক গত ২৯ সেপ্টেম্বর মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় পাঁচ কক্ষের ওই বাসা ভাড়া নেন। তবে ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা হয়নি বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন বাড়ির মালিক ও কেয়ারটেকার।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, এক নারী জঙ্গিসহ নব্য জেএমবির চার সদস্য ওই বাড়িতে উঠেছিল বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে বাড়িতে ওঠার পর ওই নারী সেখান থেকে চলে যান।

মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালিয়ে র‌্যাব জানতে পারে, ‘একটি গ্রুপ’ চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে এবং তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ আছে।

তারা একটি ‘নাশকতার পরিকল্পনা’ করছে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে জোরারগঞ্জের ওই বাড়ি চিহ্নিত করে ঘিরে ফেলেন র‌্যাব সদস্যরা।    

“তখন ভেতর থেকে জঙ্গিরা টের পেয়ে গুলিবর্ষণ করে। এবং বেশ কয়েকটি আইইডির বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে বেশ কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলতে থাকে। প্রায় ভোরের দিকেই বলা চলে, ভেতরে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। ওই বিস্ফোরণে বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়।”

ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকালে ওই বাড়ির আশপাশে তল্লাশি চালিয়ে দুটি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পান। পরে বাড়ির ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় আরও তিনটি আইইডি।

বিস্ফোরকগুলো উদ্ধার করে বাড়ির পাশের খোলা জায়গায় নিয়ন্ত্রিতভাবে বিস্ফোরণ ঘটান তারা।