নোজ গিয়ার খুললো না, ইউএস-বাংলার ‘জরুরি অবতরণ’

ঢাকা থেকে ১৭১ জন আরোহী নিয়ে কক্সবাজারের পথে রওনা হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ করেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2018, 08:21 AM
Updated : 26 Sept 2018, 03:18 PM

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বোয়িং ৭৩৭-এইটকিউএইট উড়োজাহাজটির নোজ গিয়ার বা সামনের চাকা নামছিল না।

“এ কারণে কক্সবাজারে নামতে না পেরে পাইলট চট্টগ্রামে চলে আসেন। শেষ পর্যন্ত নোজ গিয়ার না নামিয়েই পাইলট এখানে নিরাপদে ল্যান্ড করাতে পেরেছেন।”

ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ ‘আরোহীদের সবাই সুস্থ ও নিরাপদ’ বলে দাবি করলেও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী ৪০ জন যাত্রীর সামান্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “কারও আঘাত গুরুতর নয়। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন বলে প্রায় ৭০ জন যাত্রী সাময়িকভাবে ট্রমায় ভুগেছেন। তারাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছেন। বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর এ ধরনের ট্রমা হতে পারে।”

এ ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এই কমিটিকে তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

 

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইট বিএস ১৪১ কক্সবাজারে নামার কথা ছিল বেলা সাড়ে ১২টায়।

কক্সবাজারের আকাশে পৌঁছে পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) জাকারিয়া বুঝতে পারেন, নোজ হুইল কাজ করছে না। তিনি কয়েকবার চক্কর কেটে নোজ হুইল নামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কক্সবাজারে জরুরি অবতরণের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় তিনি চট্টগ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পরে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রামে চলে আসে এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি অবতরণের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও উদ্ধারকর্মীরা রানওয়েতে অপেক্ষা করতে থাকেন।   

বেলা ১টা ২০ মিনিটে বোয়িং ৭৩৭-এইটকিউএইট উড়োজাহাজটি সামনের চাকা পেটের ভেতরে রেখেই নিরাপদে শাহ আমানতের রানওয়েতে নেমে আসে।

উড়োজাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার ডটকম ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ১৪১ যাত্রাপথের এই ট্র্যাকরেকর্ড প্রকাশ করেছে। সেখানে কক্সবাজারের আকাশে কয়েকবার চক্কর কেটে পরে চট্টগ্রামে অবতরণের বিষয়টি স্পষ্ট।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার জিএম কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ফ্লাইটে ১৬৪ জন যাত্রী এবং ৭ জন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১১ জন ছিল শিশু।

“তাদের সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। আমরা বিকল্পভাবে তাদের কক্সবাজারে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।”

বিমানবন্দরের ম্যানেজার সারোয়ার ই জাহান জানান, উড়োজাহাজটি নামার সময় রানওয়ের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সেটি সরিয়ে নিতে সাড়ে ৫টা বেজে যাওয়ায় প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকে। 

এই সময়ে রিজেন্ট এয়ারের কলকাতা ফ্লাইট, ইউএস-বাংলার কলকাতা ফ্লাইট এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দোহা ফ্লাইটের যাত্রা বিলম্বিত হয়। অন্যদিকে নভোএয়ারের দুটি এবং ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসা বিলম্বিত হয়।

বিকাল পাঁচটা ৪০ মিনিটে রানওয়ে থেকে বিএস ১৪১ সরিয়ে নেওয়ার এক ঘণ্টা পর ঢাকা থেকে আসা ইউএস-বাংলার আরেকটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর কিছুক্ষণ পর নভোএয়ারের একটি ফ্লাইট অবতরণ করে।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের কক্সবাজারগামী ফ্লাইট চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ করে ‘টেকনিক্যাল কারণে’।

এ ঘটনায় যাত্রী, ক্রু বা এয়ারক্রাফটের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, রানওয়েতে উড়োজাহাজটি থামার পর সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাত্রীদের নামিয়ে আনা হয় পেছনের ইমার্জেন্সি এক্সিট দিয়ে। তাদের অনেকেই তখন কাঁদছিলেন। কেউ কেউ আবার উড়োজাহাজটির ছবি বা ভিডিও নিচ্ছিলেন।

ওই ফ্লাইটের যাত্রী নায়লা নাজনীন বলেন, কক্সবাজারে অবতরণের চেষ্টা করেও পাইলট আবার বিমান উঠিয়ে নেন। যাত্রীরা ভয় পেয়ে গেলে তাদের বলা হয়, সিগনালে সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। 

মো. মানিক নামে এক এনজিওকর্মী সাংবাদিকদের বলেন, “চট্টগ্রামে নামার সময় ঝাঁকুনি দিলে যাত্রীরা কান্না শুরু করেন। এক পর্যায়ে ঝাঁকি দিয়ে বিমান থেমে যায়। তখন ধোঁয়া দেখতে পাই। পরে পেছনের দরজা দিয়ে নেমে আসি।”

তালুকদার মো. তৌহিদ নামের আরেক যাত্রী বলেন, “নেপালের ঘটনা থেকে ইউএস-বাংলার শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। সরকারের উচিত এই বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।”

চলতি বছর ১২ মার্চ নেপালে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫১ জনের মৃত্যুর ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেয়।

এরপর থেকে দুর্ভাগ্য এ বিমান পরিবহন সংস্থারটির পিছু ছাড়ছে না। গত ছয় মাসে ইউএস-বাংলার বেশ কয়েকটি ফ্লাইট ছোটখাটো জটিলতার মুখে পড়ায় যাত্রীদের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। 

২০১৪ সালে বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দুই বছরের মাথায় ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আকাশে প্রবেশ করে।

বর্তমানে তারা সাতটি আন্তর্জাতিক রুটের পাশাপাশি দেশের ভেতরে সাতটি গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

ইউএস-বাংলার আরও খবর