বন্দরের বে টার্মিনালের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে টার্মিনালের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2018, 04:03 PM
Updated : 11 Sept 2018, 04:03 PM

মঙ্গলবার রাতে রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ হোটেলে বে টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমির চেক হস্তান্তরের জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ব্যক্তি মালিকানার ৬৬ দশমিক আট পাঁচ একর পরিমাণ ওই জমির জন্য ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা মূল্য বন্দরের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, “বন্দরের টার্মিনাল বাড়াতে হবে। বে টার্মিনালের ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। জমির জন্য ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকার চেক আজ আমরা হস্তান্তর করেছি। এরপর লালদিয়া টার্মিনালের কাজ আমরা শুরু করব।”

আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বন্দরের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেন মন্ত্রী।

“এখন আমরা হ্যান্ডল করছি ২৮ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার। একসময় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে এখানে মাত্র ১৭ লাখ টিইইউএস হ্যান্ডলিং হত। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে ভবিষ্যতে হ্যান্ডলিং আরও বাড়বে।

“এজন্য টার্মিনালগুলো বর্ধিত করতে হবে, একের পর এক। অধিগ্রহণের কাজটা শেষ হয়ে গেলে দ্রুততার সাথে বে টার্মিনালের কাজটা শুরু করব।”

সব প্রক্রিয়া সেরে এই বছরের মধ্যে বে টার্মিনালের কাজ শুরুর  আশা প্রকাশ করেন নৌমন্ত্রী।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ বন্দরই তদারক করবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে নৌমন্ত্রী জানান, ১০ বছর আগে বন্দরের তহবিলে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকায়।

অনুষ্ঠানে সাংসদ এম এ লতিফ বলেন, এই সরকার পতেঙ্গা, লালদিয়া ও বে টার্মিনাল এই তিনটা টার্মিনাল করছে। সীতাকুণ্ডের মুরাদপুরে আরেকটি টার্মিনাল করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, বে টার্মিনাল নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এখন এটা আর কল্পনা নয় বাস্তবতা। বন্দরের সক্ষমতা ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে যে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল সেই সংকট এখন কেটে যাবে।

সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, বন্দর সম্প্রসারণ শুধু নয়, নতুন বন্দর হতে যাচ্ছে এই বে টার্মিনাল।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “বে টার্মিনাল নির্মাণের কথা যখন আমরা বলছিলাম তখন কেউ কর্ণপাত করেনি। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর কোনো বিকল্প নেই।”

বে টার্মিনাল কোথায়, কীভাবে

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে প্রস্তাবিত বে টার্মিনালকে বলা হচ্ছে ‘ভবিষ্যতের চট্টগ্রাম বন্দর’। এর জন্য প্রাথমিকভাবে মোট ৮৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধারের (রিক্লেইম) পর বে টার্মিনালের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২৫০০ একরে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল এরিয়ার পরিমাণ ৪০০ একর।

বে টার্মিনালের প্রস্তাবিত স্থানের পূর্ব পাশে পোর্ট এক্সেস রোড ও রেল লাইন এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের খেঁজুরতলার বিপরীত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত অংশে পলি জমে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চর সৃষ্টি হয়েছে। এই চরেই বে-টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এই চর ও উপকূলের মাঝামাঝি প্রায় ৮০০ মিটার প্রশস্ত জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি হয়েছে। এই পথের গভীরতা ৭ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত।

খনন করলে এই পথে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফট (জাহাজের পানিতে নিমজ্জিত অংশের গভীরতা) ও ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ চালানো সম্ভব।

চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে দিনে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা সময়ে নয় দশমিক ৫০ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ চলাচল করতে পারে।

বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে দিনে-রাতের যে কোনো সময়ে এর চেয়ে বেশি দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে আসা জাহাজগুলো সর্বোচ্চ ১৮০০ কন্টেইনার বহন করতে পারে। বে টার্মিনালে ৫০০০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। 

প্রস্তাবিত টার্মিনালের জেটিগুলোতে মোট ৩০ লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানো সম্ভব হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।  

একসঙ্গে ৩০-৩৫ টি জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে বে টার্মিনালের প্রস্তাবিত জেটিগুলোতে। এখানে কয়লা, ক্লিংকার ও জ্বালানি তেল খালাসের জন্য থাকবে আলাদা জেটি।

২০২৩ সালের মধ্যে বে টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালের ১৭ অগাস্ট বে টার্মিনাল নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম বন্দর।

জার্মান প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কে এস কনসালটেন্টস লিমিটেড যৌথভাবে এই সমীক্ষা পরিচালনা করে।