ছেলের পাশে চিরঘুমে রমা চৌধুরী

একাত্তরের বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীকে তার শেষ ইচ্ছা অনুসারে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে ছেলের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2018, 01:54 PM
Updated : 3 Sept 2018, 01:59 PM

সোমবার বিকাল পাঁচটার দিকে ছোট ছেলে দীপঙ্কর টুনুর সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

রমা চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সহচর এবং বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শেষ ইচ্ছা অনুসারে গ্রামে টুনুর সমাধির পাশে উনাকে সমাহিত করা হয়েছে।

“মৃত্যুর আগে তিনি এই ইচ্ছের কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন।”

১৯৯৮ সালে রমা চৌধুরীর চতুর্থ সন্তান দীপঙ্কর টুনু সড়ক দুর্ঘটনার মারা যান। দাহ না করে তাকে সমাহিত করা হয়।

এরও আগে ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে মারা যাওয়া দুই ছেলে সাগর (৫) এবং টগরকেও (৩) সমাহিত করা হয় বোয়ালখালীতে।

সোমবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মারা যান বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী।

এরপর সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জননী সাহসিকা এই মাকে সম্মান জানায়।

শহীদ মিনার থেকে রমা চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার শেষ জীবনের আবাসস্থল নগরীর চেরাগী পাহাড় চত্বরে। সেখান থেকে বোয়ালখালীর পোপাদিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা রমা চৌধুরী ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশা হিসেবে জীবনে তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৩ মে তিন শিশু সন্তান নিয়ে পোপাদিয়ার গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন রমা চৌধুরী। সেসময় তার স্বামী ছিলেন ভারতে।

একাত্তরে এলাকার রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী বাহিনী রমা চৌধুরীর বাড়িতে হানা দেয়, তাকে ধর্ষণের পর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় হানাদাররা। রমা চৌধুরীর দুই সন্তান সাগর (৫) ও টগর (৩) এই ঘটনার দুই বছরের মধ্যেই মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধের হারানো সন্তানদের ঠাঁই হওয়া মাটিতে আর কখনোই জুতা পায়ে হাঁটেননি এই বীরাঙ্গনা।

রমা চৌধুরী ’৭১ এর জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’, ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’সহ ১৯টি বই লিখে গেছেন।

নিজের লেখা বই বিক্রি করতেন। বই বিক্রির অর্থে একটি অনাথ আশ্রম গড়ার স্বপ্ন ছিল তার।

গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে নগরীর খুলশীতে ডায়েবেটিস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রমা চৌধুরীকে। 

এরপর ২৪ ডিসেম্বর কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ভর্তি হয়েছিলেন রমা চৌধুরী। পরবর্তীতে ১৭ জানুয়ারি সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ২৭ অগাস্ট আবারও তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলের আইসিইউতে নেওয়া হয়।

সবশেষ রোববার রাতে তাকে লাইফ সার্পোটে নেওয়া হয়।