নাম ভাঁড়িয়ে পলাতক, ১১ বছর পর ধরা

চট্টগ্রাম নগরীর বারিক বিল্ডিং এলাকায় ২০০৪ সালের ১৬ অগাস্ট র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ‘অমর দাশ’সহ পাঁচজনকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2018, 01:20 PM
Updated : 14 August 2018, 01:36 PM

অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় সেই পাঁচ আসামিকে আদালত ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। তবে জামিন নিয়ে পালিয়েছিলেন ‘অমর দাশ’। 

পরোয়ানা অনুযায়ী অমর দাশকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পারে, তিনি আসল আসামি নন। তার চাচাত ভাই স্বপন দাশ হলেন আসল অপরাধী। গ্রেপ্তারের পর স্বপন তার নাম গোপন করে চাচাত ভাইয়ের নাম বলেছিলেন। 

পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে স্বপন পরিচয় গোপন করার দায় স্বীকার করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।  

নাম-পরিচয় গোপন রেখে প্রতারণার অভিযোগে স্বপন দাশের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় নতুন একটি মামলাও করেছে পুলিশ।

দণ্ডবিধির ৪১৯ ধারায় (অন্যের রূপ ধারণ করে প্রতারণা) এই মামলাটি করেছেন সদরঘাট থানার এসআই অলি উল্লাহ।

সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্দুকযুদ্ধের পর র‌্যাব যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের মধ্যে স্বপন ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। “গ্রেপ্তারের পর স্বপন র‌্যাবের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছিল অমর দাশ বলে। তার বাবার নাম দেবেন্দ্র দাশ হলেও তা গোপন করে ব্যবহার করেছিল অমরের বাবা রেবতী দাশের নাম।”

ওই ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে ডবলমুরিং থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে এবং ডাকাতির প্রস্তুতি আইনে দুটি মামলা করা হয়।

রুহুল বলেন, ২০০৭ সালে স্বপন জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পান। গত বছরের ১৬ অক্টোবর আদালত অস্ত্র আইনে ১৭ ও বিস্ফোরক আইনে পাঁচ বছর করে মোট ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয় পাঁচ আসামিকে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে।

ওই পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে পুলিশ গত ৫ জুলাই স্বপনের চাচাত ভাই অমর দাশকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে।

পরিদর্শক রুহুল বলেন, “স্বপন তার নাম, মা-বাবার নাম গোপন করলেও স্থায়ী ঠিকানা সাতকানিয়া উপজেলা ও বর্তমান ঠিকানা ব্যবহার করেছে নগরীর মাঝিরঘাটের সাহেব পাড়া। বর্তমান ঠিকানা আমাদের থানায় হওয়ায় আমরা ওয়ারেন্ট মূলে গত ৫ জুলাই অমর দাশকে গ্রেপ্তার করি।

“তাকে গ্রেপ্তারের পর জানতে পারি, অমর দাশ নামে যে আসামি গ্রেপ্তার হয়েছিল আগে, তার আসল নাম স্বপন দাশ। সম্পর্কে তারা কাকাত-জ্যাঠাত ভাই।”

সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অমর দাশকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনার পর তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, কখনও কারাবাস করেননি। তবে তার এক চাচাত ভাই একবার গ্রেপ্তার হয়ে কিছু দিন কারাগারে ছিল।”

পুলিশের কাছে ঘটনাটি বলার পর অমর পুরো বিষয়টি তুলে ধরে একটি লিখিত আবেদন করেন, তা তখন আদালতে জানায় পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম বলেন, “মানবিক দৃষ্টিতে নিয়ে বিষয়টি আমি আদালতকে জানাই। আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত শুরু করি। কারাগারে গিয়ে ২০০৪ সালের নথিপত্র যাচাই করি। তখন দেখি, কারাগারে সংরক্ষিত শনাক্তকরণ চিহ্নের সঙ্গে পরবর্তীতে গ্রেপ্তার অমরের কোনো মিল নেই।”

তখন পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম ২০০৪ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা মতিনের সঙ্গে অমরকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

“তখন মতিন বলে, তাদের সাথে গ্রেপ্তার হওয়া অমর ও বর্তমানে গ্রেপ্তার ব্যক্তি এক নয়। আগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির বাম পায়ে গুলির জখম ছিল।”

সব জেনে আসল স্বপনকে গ্রেপ্তারে পুনরায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। তাতে সোমবার নগরীর কদমতলী এলাকা থেকে স্বপনকে ধরা হয়।

ওসি নেজাম বলেন, “স্বপন পুলিশের কাছে পরিচয় গোপনের বিষয়টি স্বীকার করে। তাছাড়া ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে জখমের চিহ্নটি এখনও দেহে স্বপনের আছে।”