জলাবদ্ধতা: সিডিএর প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট মন্ত্রী

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নাধীন সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2018, 11:20 AM
Updated : 12 August 2018, 11:20 AM

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সম্মেলন কক্ষে রোববার দুপুরে এ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান।

তবে প্রকল্প শেষে এর অধীনে নির্মিত অবকাঠামোগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোন সংস্থা পালন করবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

মনিটরিং কমিটির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও প্রকল্প শেষ হওয়ার পর অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন।

সভা শেষে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা একটা মেগা প্রকল্প। কিছু কাজ আমরা করছি। কিছুটা সিটি করপোরেশন ও ওয়াটার ডেভলপমেন্ট বোর্ড করছে। এটার একটা মেয়াদ আছে।

“যেভাবে আমাদের সেনাবাহিনী কাজ করছে। চট্টগ্রামের যে দুঃখ- জলাবদ্ধতা, এটা ইনশাল্লাহ সমাধান হবে। সেটার ব্যবস্থা নিয়ে আমরা নেমেছি। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ভালো ফল মিলবে।”

প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এ বর্ষা মৌসুমে যে কাজ করেছে, দেখলাম। অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট।”

সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মাত্র এক শতাংশ অর্থের কাজ শুরু হয়েছে। ওই টাকায় যা কাজ হবে তার মাত্র ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্যেই সুফল মিলতে শুরু করেছে।

“প্রথম ডিপিপিতে ৩৬টি খাল আমরা রেখেছি। পরিষ্কার করা, খনন, দখলমুক্ত, রেটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, একপাশে রাস্তা, সিল্ট ট্রেপ, নিচু ব্রিজ-কালভার্ট উঁচু করা এবং এসংশ্লিষ্ট সব ইউটিলিটি লাইন উঁচু করা হবে। যা করা প্রয়োজন সব করা হবে।”

আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী দুঃসাহসিক কাজে হাত দিয়েছে। সমাধান হবেই হবে।”

সিডিএর অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সব পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনী।

এর আগে সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল রেজাউল মজিদ বলেন, যে রেগুলেটরগুলো নির্মাণ করা হবে সেগুলোর দায়িত্ব কাউকে না কাউকে দেওয়া হোক। সেটা কোনো বডি হতে পারে, যারা দেখাশোনা করবে।

আরেক কর্মকর্তা লে কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, “এই প্রকল্পের অধীনে নেভিগেশন ব্যবস্থাসহ স্লুইস গেট ও রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে, যা আমাদের দেশে প্রথম। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষিত লোক প্রয়োজন।”

মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এটা জরুরি। প্রতিটি স্লুইস গেটে মানুষ থাকতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড অনেক স্থাপনা করে কিন্তু পরে বিকল হয়ে যায়। এখানেও দেখতে হবে পানি যাতে জমে না থাকে। না হলে নষ্ট হবে।”

পাশাপাশি প্রকল্পের অধীনে খালগুলোর এক পাড়ে সড়ক ও অন্য পাড়ে হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করতে বলেন মন্ত্রী।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামে ১৯৮৩ সালে একদিনে সর্বোচ্চ ৫১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সেটাকে ভিত্তি ধরে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

“প্রকল্পের আওতায় থাকা ৩৬টি খালের মধ্যে চাক্তাই খাল সিস্টেমে ২১টি এবং মহেশখাল সিস্টেমে ৯টি খাল যুক্ত। এর বাইরে আছে ছয়টি খাল। ইতিমধ্যে এক কোটি ১৪ লাখ সিএফটি ময়লা-মাটি অপসারণ করা হয়েছে।”

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত ৯ অগাস্ট একনেকের অনুমোদন পায়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই প্রকল্পের আওতায় খালের মাটি খনন, কাদা অপসারণ, নালা সংস্কার ও নির্মাণসহ বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপনের মত কাজও সিডিএ করবে।

সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বন্দরের হাইড্রোগ্রাফার শামসুল আরেফিন প্রমুখ।