জলাবদ্ধতা: সিডিএর প্রকল্পের বিশদ জানানোর আহ্বান

চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর বাস্তবায়নাধীন মেগাপ্রকল্পের বিষয়ে জনগণকে বিস্তারিত জানানোর আহ্বান জানিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2018, 09:44 AM
Updated : 7 August 2018, 09:44 AM

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ফোরামের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

পাশাপাশি চট্টগ্রামে বৃহৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের আহ্বান জানান ফোরাম নেতারা।

ফোরাম সভাপতি অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, “চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাদের যে পরিকল্পনা তা নিয়ে কিছু বলছি না। কিন্তু পরিকল্পনা যেন অবশ্যই বাস্তবায়িত হয়।

“অনেকে বড় বাজেটের প্রকল্প এনে মানুষকে খুশি করে। অথচ কাজ শেষে বাস্তব অবস্থার উন্নতি হয় না। জলাবদ্ধতা নিরসনের এই মেগাপ্রকল্প বিষয়ে সাধারণ মানুষ কিছুই জানে না। জনগণকে অবশ্যই বিস্তারিত জানাতে হবে।”

তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে হবে। কেউ ডাকলে কেরানি বা দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা পাঠায়, সেটা তো হতে পারে না।

“এটা তো ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় না। আপনারা সরকারি চাকরি করেন, সিডিএ বা ওয়াসা যেখানেই হোক। একমাত্র স্থানীয় প্রশাসন ডাকলে তারা যায়। এই গোলামির খাসলত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে তার রক্ষণাবেক্ষণ কিভাবে হবে তা নিশ্চিত করার উপরও জোর দেন ফোরাম সভাপতি।

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত ৯ অগাস্ট একনেকের অনুমোদন পায়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে নেওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই প্রকল্পের আওতায় খালের মাটি খনন, কাদা অপসারণ, নালা সংস্কার ও নির্মাণসহ বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপনের মত কাজও সিডিএ করবে।

এই প্রকল্প অনুমোদনের পর নগরীর দখল হওয়া খাল উদ্ধারে সিটি করপোরেশনের শুরু করা উচ্ছেদ অভিযানে ভাটা পড়ে এবং সিডিএর সাথে সিটি করপোরেশনের শীতল সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর খালগুলো থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও মনিটরিং টাস্কফোর্সের সভায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সিডিএর প্রকল্পে ‘অসঙ্গতি’ আছে বলে অভিযোগ করেন।

পরে প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯ এপ্রিল সিডিএর সাথে সেনাবাহিনীর সমঝোতা স্মারক সাক্ষর অনুষ্ঠানে গিয়ে শতভাগ সহযোগিতার আশ্বাস দেন মেয়র।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের মহাসচিব স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, “মেগা প্রকল্পের কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক সব বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাই। কি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন হবে তাও জানতে চাই।

“না জানলে তো সহযোগিতা করতে পারব না। কি ত্রুটি তাও চিহ্নিত করতে পারব না। তিন বছরে প্রকল্প মেয়াদ শেষেই তো সব শেষ হয়ে গেল না। ড্রেনেজ ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। রক্ষণাবেক্ষণ যেন স্থায়ী হয়। সিডিএ আর সিসিসি দুই মেরুতে। এরা কাজ শেষ করে গেলে ওরা দায়িত্ব না নিলে তো সুফল মিলবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, “জনগণকে জানানো হোক খাল খননসহ মেগাপ্রকল্পের প্রতিটি কাজ কখন শুরু ও কখন শেষ হবে। এই বিশাল প্রকল্প তিন বছরের মেয়াদে শেষ করা সম্ভব কি না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।

“জনগণকে জানানো হোক প্রতিটি খাল সংস্কারের পর সে খাল দিয়ে অতিবৃষ্টির পানি কত সময়ে নিষ্কাশিত হবে। কাজের সময় নগরীর পরিবেশের ওপর কি প্রভাব পড়বে, কেমন জনদুর্ভোগ হবে এবং এর ব্যবস্থাপনা কী হবে। নতুন খাল খনন হবে কি না?”

প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “প্রকল্পে কি আছে জনগণ জানে না। উন্মুক্ত করা না হলে কিভাবে সংযোজন বিয়োজন সম্ভব? আমরা প্রকল্পের পক্ষে। চট্টগ্রাম এই বরাদ্দে অনেক কষ্টে পেয়েছি। এটা যেন বাস্তবায়ন হয়। বিরোধীতা নয় সহযোগিতা করতে চাই।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের নেতা আকতার কবির চৌধুরী, ইতিহাস গবেষক শামসুল হোসাইন, শাহরিয়ার খালেদ প্রমুখ।