মুশফিকুর রহমান (৩২) নামে ওই যুবককে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইলিয়াছ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
মুশফিক নিহত মনোয়ারা বেগমের (৯৪) নাতি; নিহত মেহেরুন্নেসা (৬৭) মুশফিকের ফুপু।
পুলিশ কর্মকর্তা ইলিয়াছ বলেন, টাকা চেয়ে না পেয়ে দাদি ও ফুপুকে হত্যা করেন মুশফিক।
গত ১৫ জুলাই খুলশী থানার আমবাগান এলাকার মেহের মঞ্জিল নামে ভবনটির পানির ট্যাংক থেকে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা এবং তার মা মনোয়ারার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় মনোয়ারার সেজ ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে খুলশী থানায় একটি মামলা করেছিলেন।
থানা ঘুরে মামলার তদন্ত যায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। গোয়েন্দা পুলিশ মুশফিকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে সোমবার নগরীর টাইগার পাস এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মুশফিক মনোয়ারার মেজ ছেলে মতিউর রহমানের ছেলে। ২০০৪ সালে মতিউর মারা যাওয়ার পর মুশফিকের মাকে বিয়ে করেন তার সেজ চাচা মোস্তাফিজুর, যিনি মামলার বাদী।
মুশফিকের মা ঢাকায় থাকলেও তিনি ছোট বেলা থেকে দাদী ও ফুফুর কাছে থাকতেন। বছর কয়েক আগে নিজের পছন্দে তিনি বিয়ে করে আলাদা থাকা শুরু করেছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
ডিবি কর্মকর্তা ইলিয়াছ বলেন, “১৪ জুলাই গভীর রাতে মুশফিক ওই বাসায় গিয়ে তার ফুফু মেহেরুন্নেসার কাছ থেকে টাকা চায়। কিন্তু মেহেরুন্নেসা টাকা না দেওয়ায় জোর করে তার হাত বেঁধে চেক বই নিয়ে স্বাক্ষর করতে বলে।
“স্বাক্ষর না করায় মুশফিক বসার পিঁড়ি দিয়ে মেহেরুন্নেসাকে আঘাত করে। এতে সে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। পরে আলমারি খোলার সময় তার দাদী মনোয়ারা বেগম নড়াচড়া করলে তাকেও গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।”
এরপর দাদি ও ফুপুর লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে দিয়ে মুশফিক রাত আড়াইটার দিকে তার মুরাদপুরের বাসায় চলে গিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
সকালে মনোয়ারার ছোট ছেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফোন করে মা ও বোনকে না পেয়ে ভাগ্নে মুশফিক এবং আরেক ভাগ্নে বেলালকে ফোন দেন। তখন আবার মুশফিকও দাদির বাসায় এসেছিলেন।
মেহেরুন্নেসাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। তবে ছোট বেলা থেকেই তারা চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। আমবাগান এলাকার ওই জমি তিনি কেনেন ২০০০ সালে। ছয় বছর পর সেখানে একতলা বাড়ি করেন। বছর তিনেক আগে চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তা শেষ হয়নি।
অবিবাহিত মেহেরুন্নসা মাকে নিয়ে এই বাড়িতেই থাকতেন।
মেহেরুন্নেসার নয় ভাই বোনের মধ্যে বড় দুই ভাই মারা গেছেন, একজন ঢাকায় ও একজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আর বোনদের মধ্যে বড় বোন ময়মনসিংহে, মেজ বোন সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে আর অপর দুইজন যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডে থাকেন।