মামলা নেওয়ার দাবিতে অনশনে বসবেন রাইফার বাবা 

শিশু রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় চার চিকিৎসককে দায়ী করে থানায় বাবা রুবেল খানের দেওয়া অভিযোগটি ২৪ ঘণ্টায়ও মামলা হিসেবে গ্রহণ হয়নি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2018, 01:25 PM
Updated : 19 July 2018, 01:25 PM

শুক্রবারের মধ্যে মামলা নেওয়া না হলে শনিবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন রুবেল খান।

এরপরও মামলা নেওয়া না হলে আমরণ অনশনে বসবেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক রুবেল খান।

রাইফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনার পর বুধবার মামলার এজাহার চকবাজার থানায় জমা দিয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গে বিভিন্ন সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাও ছিলেন।

 চকবাজার থানার ওসি আবুল কালাম তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর মামলাটি গ্রহণ করব।”

বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্তও মামলা না নেওয়ার পর নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলাটি প্রক্রিয়াধীন আছে।”

তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

রুবেল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি প্রথমেই মামলা করতে চেয়েছিলাম। তখন চকবাজার থানার ওসির উপস্থিতিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

“সেসময় পুলিশ পরামর্শ দেয়, ওই কমিটির প্রতিবেদনে যারা দোষী হবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। এখন রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তারপর আমি মামলা করতে গেছি।”

কমিশনারের সঙ্গে দেখা করার পরও মামলা না নিলে নিজের পদক্ষেপ জানিয়ে রুবেল বলেন, “তারপরও মামলা না নিলে আমি আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করব।”

এজাহারে শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান রায় চৌধুরী, ম্যাক্স হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক দেবাশীষ সেন গুপ্ত, শুভ্র দেব এবং ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিয়াকত আলীকে আসামি করা হয়।

রুবেল খানের সঙ্গে মেয়ে রাইফা (পারিবারিক অ্যালবামের ছবি)

দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮ জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়।

‘ভুল চিকিৎসায়’ রাইফার মৃত্যুর অভিযোগ তুলে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ ওই হাসপাতালে তখন কর্তব্যরত এক চিকিৎসক ও এক নার্সকে ধরে থানায় নিলে চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হন। বিএমএর চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।

এরপর চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা দাঁড়ায় মুখোমুখি অবস্থানে; দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও পালন করেন। এর মধ্যে র‌্যাব ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এক দিনের ধর্মঘটও পালিত হয়।      

এদিকে রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে।

সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি তাদের প্রতিবেদন কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের বিভিন্ন ত্রুটির কথা তুলে ধরে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেবকে বরখাস্ত করে। তবে বিধান রায় তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারার কথা জানিয়ে বলে, এই চিকিৎসককে আর হাসপাতালে ডাকবেন না তারা।