চট্টগ্রামে মা-মেয়ে হত্যার পেছনে সম্পদের লোভ?

চট্টগ্রামের আমবাগানে সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্য নিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করে রিজার্ভ ট্যাংকে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাদের একজন স্বজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2018, 04:32 PM
Updated : 24 July 2018, 04:01 PM

পুলিশ বলছে, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা (৬৭) এবং তার মা মনোয়ারা বেগমকে (৯৪) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেই তারা মনে করছে।

তবে হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী।

রূপালী ব্যাংকের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মেহেরুন্নেসা তার মাকে নিয়ে নগরীর খুলশী থানাধীন আমাবাগান এলাকায় নিজের মালিকানাধীন একটি বাড়িতে থাকতেন। রোববার দুপুরের দিকে মেহের মঞ্জিল নামের ওই ভবনের রিজার্ভ ট্যাংক থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামী জোন) সোহেল রানা জানান, মনোয়ারা বেগমের নয় সন্তান পরিবার নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় থাকেন। আমবাগানের ওই বাসায় মা-মেয়ে ছাড়া আর কেউ থাকতেন না।

সকালে স্বজনদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে। মেহেরুন্নেসাকে মাথায় আঘাত করে এবং মনোয়ারাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ রিজার্ভ ট্যাংকে ফেলে রাখা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা।

মেহেরুন্নেসাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। তবে ছোট বেলা থেকেই তারা চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন। আমবাগান এলাকার ওই জমি তিনি কেনেন ২০০০ সালে। ছয় বছর পর সেখানে একতলা বাড়ি করেন। বছর তিনেক আগে চারতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তা শেষ হয়নি।

মেহেরুন্নেসার নয় ভাই বোনের মধ্যে বড় দুই ভাই মারা গেছেন, একজন ঢাকায় ও একজন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আর বোনদের মধ্যে বড় বোন ময়মনসিংহে, মেজ বোন সীতাকুণ্ডের ফৌজদার হাটে আর অপর দুইজন যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডে থাকেন।

মেহেরুন্নেসার মেজ বোনের ছেলে বেলাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চার ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে মেহেরুন্নেসা ছিলেন অবিবাহিত। মাকে নিয়ে তিনি একাই ওই বাসায় থাকতেন।  

সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেলালের মামা ফোন করে বলেন, তিনি মা আর বোনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাচ্ছেন না। এরপর আরেক খালাতো ভাই এবং স্থানীয় একজনকে নিয়ে বেলাল ওই বাসায় যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।

বেলাল বলেন, বাড়ি করার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় কিছু লোক তার খালার কাছে চাঁদা দাবি করত। স্থানীয় প্রভাবশালী কেউ ওই সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে তার সন্দেহ।

“ওই জমি বিক্রি করার জন্য আমরা লোক খুঁজছিলাম। খালা কাজটা গোপনে করতে চাইছিলেন। তার আশঙ্কা ছিল, স্থানীয় লোকজন জানতে পারলে তিনি হয়ত বাড়ি বিক্রি করতে পারবেন না।”

তবে কারা মেহেরুন্নেসার সম্পত্তির দিকে নজর দিয়েছিল, তাদের নাম বলেননি বেলাল।  

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা ভবনের ওপরের তিন তলার কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়ির দুইপাশে খোলা জায়গা।

পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আব্দুল ওয়ারীশ বলছেন, হত্যাকাণ্ডে একাধিক লোক থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। তারা দরজা ভাঙার জন্য শাবল নিয়ে গেলেও তা ব্যবহার করেনি। ঘরের আলমারি ভাঙা থাকলেও কিছু নিয়ে যায়নি।

হত্যাকারীরা বাসার মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ না করে অন্য কোনো দিক দিয়ে ঘরে ঢুকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। 

সহকারী কমিশনার সোহেল রানা বলেন, ওই বাসা থেকে মা-মেয়ের দুটি মোবাইল ফোন খোয়া গেলেও খুনিরা সিম ফেলে রেখে গেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও সিআইডি সদস্যরা ওই বাসায় তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।