র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মিমতানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেদীবাগ এলাকার ম্যাক্স হাসপাতাল, ওআর নিজাম রোডের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল আর প্রবর্তক মোড়ের সিএসসিআর হাসাপাতালে একযোগে এই অভিযান শুরু হয়।
ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযনের নেতৃত্বে রয়েছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে ডা. দেওয়ান মাহমুদ মেহেদি হাসানও উপস্থিত রয়েছেন সেখানে।
র্যাব কর্মকর্তা মিমতানুর বলেন, অভিযানে বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে ব্যবহৃত উপকরণ, ওষুধ এবং হাসপাতালের নথিপত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
অভিযান শুরুর ঘণ্টাখানেক পর র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “ইতোমধ্যে ম্যাক্স হাসপাতালে কিছু অসঙ্গতি পেয়েছি। রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন স্যাম্পল কালেকশন করে তারা চট্টগ্রাম ও দেশের বাইরের বিভিন্ন ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। অনেকটা কমিশন এজেন্টের মত তারা কাজ করেন।
"অথচ রোগীরা তাদের বিশ্বাস করেই এখানে মেডিকেল টেস্ট করান। দেশের বাইরে স্যাম্পল পাঠাতে সরকারি অনুমোদন লাগে। অথচ কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই তারা এসব নমুনা বিদেশে পাঠিয়েছে।"
সারোয়ার আলম বলেন, একজন নমুনা সংগ্রহ করছে, অন্যজন পরীক্ষা করছে আবার অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে অন্য জায়গায়। এভাবে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে ম্যাক্সের ল্যাবে।
“এগুলো আসলেই পরীক্ষা হয়েছে কি না সেটাই তো নিশ্চিত না। বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবে এইচএসসি পাস লোকজন চাকরি করছে। এখানে মিনিমাম স্নাতক ডিগ্রিধারী বা বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্নদের কাজ করার কথা। একটা হাসপাতাল চালাতে হলে অবশ্যই নমুনা পরীক্ষার নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেটা তাদের নেই।"
দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে গত ২৮ জুন বিকালে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়।
‘ভুল চিকিৎসায়’ তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা। পরে ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিও এ ঘটনার তদন্ত করে।
সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের প্রতিবেদন দেয়, যাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সিভিল সার্জনের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় এবং ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এ রকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই তাদের ছিল না।
“শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ট সময় ও মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির রোগ জটিলতার বিপদকালীন সময়ে আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদান করেননি বলে শিশুর পিতা-মাতা যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যাহা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।”