অপপ্রচার বন্ধ না করলে সাংবাদিকদের চিকিৎসা নয়: বিএমএ নেতা

‘ভুল চিকিৎসায়’ শিশু মৃত্যুর নিয়ে ‘অপপ্রচার’ বন্ধ না করলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের চেম্বার ও বেসরকারি ক্লিনিকে সাংবাদিকদের চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের বিএমএ নেতা ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2018, 02:37 PM
Updated : 2 July 2018, 02:37 PM

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে বিএমএ চট্টগ্রাম আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল এ কথা বলেন।  

তিনি উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সাংবাদিকরা অপপ্রচার বন্ধ না করলে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বার ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা না দিয়ে তাদেরকে সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবেন।”

সোমবার বেলা সোয়া ১২টা থেকে সোয়া দুইটা পর্যন্ত সড়ক আটকে এ সমাবেশে চট্টগ্রাম মেডিকেলের চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।

সড়ক বন্ধ থাকায় অনেক রোগীকে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। অনেক অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকরী অটোরিকশাও পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে চলাচল করে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতার সঙ্গে সাংবাদিকদের ‘অশোভন আচরণের’ প্রতিবাদে চিকিৎসকরা এ সমাবেশ করেন।

গলা ব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর মেহেদীবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার রুবেল খানের আড়াই বছর বয়েসী শিশুকন্যা রাইফা শুক্রবার রাতে মারা যায়।

অভিযোগ ওঠে চিকিৎসক ও কতর্ব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সাংবাদিকেদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ওই হাসপাতালের ডিউটি চিকিৎসক ও নার্সকে থানায় নিয়ে গেলে সেখানে সাংবাদিক ও সিইউজে নেতাদের সঙ্গে ফয়সাল ইকবাল অশোভন আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘রাইফাকে হত্যা করা হয়েছে’ এ অভিযোগ তুলে গত দুইদিন ধরে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সংগঠনগুলো আন্দোলন এবং দায়ীদের বিচার দাবি করে আসছে।

দাবির মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। রোববার রাতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্সের ত্রুটি আছে এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চিকিৎসকদের প্রতিবাদ সমাবেশে ডা. ফয়সাল বলেন, “চট্টগ্রামে অনেক মৃত্যুর ঘটনায় আগেও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বিনা তদন্তে কোনো চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করার সাহস করেনি।”

রাইফার মৃত্যুর পর দুই নার্স ও এক চিকিৎসককে থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আমাদের অনেক বন্ধু ও আত্মীয় সাংবাদিক আছে। সেদিন আমি থানায় গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলিনি। আমি ওসির কাছে জানতে চেয়েছি কোনো অভিযোগ ছাড়া কেন তাদের থানায় ধরে নিয়ে এসেছে।

“এটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি এ অপরাধ বারবার করতে রাজি আছি।”

চট্টগ্রাম মেডিকেলের আশপাশে কোনো ক্লিনিকে নিজের অংশীদারিত্ব নেই দাবি করে বন্দর এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শেয়ার থাকার কথা জানান এই বিএমএ নেতা।  

চিকিৎসককে থানায় নিয়ে যাওয়ায় চকবাজার থানার ওসি আবুল কালামের প্রত্যাহারও দাবি করেন ফয়সাল।

সাংবাদিকদের ‘কলম সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তিনি কিছু সাংবাদিক পুরানো একটি নিউজ ফেইসবুকে তুলে এনেছেন বলে অভিযোগ করেন।

ফয়সাল বলেন, “তা আইসিটি আইনে অপরাধ। এজন্য বিএমএর পক্ষ থেকে আইনজীবীর সাথে কথা বলা হয়েছে।

“সাংবাদিকরা যদি এই অপপ্রচার বন্ধ না করেন তাহলে আপনাদের সাথে আমাদের যে মধুর সম্পর্ক তা বজায় রাখতে পারব কিনা সন্দিহান।”

সাংবাদিকরা তার মাধ্যমে ডাক্তারের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করেন দাবি করে ফয়সাল বলেন, “আপনারা যদি আমার বিরুদ্ধে পোস্টিং বাণিজ্যের কথা বলেন নানা ধরনের অভিযোগ করেন..আপনারা আমার বন্ধু, আপনারা যদি আমাদের সাথে সুসম্পর্ক নষ্ট করেন তাহলে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বারে আপনাদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতে বাধ্য হব।

“চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতাল খোলা আছে। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উন্মুক্ত। যেহেতু আমরা সরকারের কর্মচারী ও বেতন গ্রহণ করি সেহেতু দেশের সকল জনগণকে আমরা চিকিৎসা দিতে বাধ্য থাকি। সাধারণ মানুষের মতো আপনারাও লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকায় টিকিট করে চিকিৎসা নিন।”

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা বিদেশি চিকিৎসকদের এজেন্সি নেওয়ার জন্য মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছে।

বিএমএ সভাপতি মুজিবল খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন মাহমুদ, বিএমএর যুগ্ম সম্পাদক রবিউল করিম, ট্রেজারার আরিফুল আমিন, গাইনি বিভাগের প্রধান শাহানার, নবজাতক বিভাগের প্রধান জগদ্বীশ দাশ, শিশু বিশেষজ্ঞ সুভাষ সূত্রধর, বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম, মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ, ছাত্র সংসদ, ইন্টার্ন চিকিৎক ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা।

এদিকে রাইফার মৃত্যু এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে অশোভন আচরণকারী ফয়সাল ইকবালের বিচার চেয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।

সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সহ-সভাপতি শহীদুল আলম, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ প্রমুখ।