প্লাবিত উপজেলাগুলো হল- ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, পটিয়া, সাতকানিয়া ও আনোয়ারাঅ
লঘুচাপ ও সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে ১০ জুন বিকাল থেকে চট্টগ্রামে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলায় পানি উঠতে শুরু করে। এরমধ্যে হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানিও বাড়তে শুরু করে।
মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজান, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের হাটাহাজারী ও ফটিকছড়ি অংশ এবং চট্টগ্রাম-বান্দরবান (আংশিক) সড়কের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া অংশে পানি উঠে যায়।
ফটিকছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসদরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ মঙ্গলবার থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোসাঙ্গিরি, সমিতির হাট, সুয়াবিল ও পাইন্দংসহ বিভিন্ন এলাকা এখনো পানির নিচে।
“মূল সড়কে পানি না থাকলেও কয়েকটি আন্ত:সংযোগকারী সড়কে পানি আছে। অমাবস্যার কারণে হালদা নদীর পানি নামতে পারছে না।”
দীপক কুমার রায় বলেন, ১৭ টন চাল ও এক লাখ টাকা জেলা প্রশাসন থেকে এবং উপজেলা পরিষদ থেকে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। বিতরণ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক আক্কাছ উদ্দিন জানান, দাঁতমারা এবং নাজিরহাট ইউনিয়নে এখনো পানি আছে। বিপুল পরিমাণে চাষের জমি তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেখানকার মির্জাপুর, চারিয়া, চিপাতলি, গুমানমর্দন, মেখল, শিকারপুর, বুড়িশ্চর ও নাঙলমোড়া এলাকা বৃহস্পতিবারও পানিবন্দি ছিল।
নাঙলমোড়া ও চিপাতলি এলাকায় হালদার ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া নগরীর প্রবেশপথ মোহরা এবং রাস্তার মাথা এলাকায় তিনদিন ধরে পানি জমে আছে।
মোহরার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, “বুধবার পানি একটু কমেছিল। আজ আবার বাড়তে শুরু করেছে। পানির কারণে তিনদিন বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি।”
রাউজান উপজেলায় মঙ্গলবার থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি।
উপজেলার হলুদিয়া, ডাবুয়া, চিকদাইর, গহিরা, পৌর সদর, বিনাজুরি, নোয়াপাড়া ও উরকির চর এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন বলেন, ইছাপুরে মূল সড়কে পানি থাকায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
“উপজেলার ১০১০টি পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। বেশকিছু ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। শত শত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হালদার পানির সাথে পাহাড়ি ঢল যোগ হওয়ায় মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছেন।”
আনোয়ারার স্থানীয়রা জানান, পড়ইকোড়া ও রায়পুর ইউনিয়নে কিছু এলাকায় পানি নামেনি। সাঙ্গু নদীতে পানি বাড়ায় এবং রায়পুরের বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, শঙ্খের (সাঙ্গু) ভাঙ্গনের কারণে আটটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“এরমধ্যে চরতি, আমিলাইশ, নলুয়া, বাজালিয়া ও কেওচিয়ায় এখনো হাজার-হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। দুপুরে কিছুটা কমলেও বিকেলে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে।”
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম জানিয়েছেন, প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।