হাবিব নিহত হওয়ার চার দিন পর বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, র্যাব হাবিব শেখ নামে একজনকে খুঁজছিল, হাবিবুর রহমানকে নয়। কিন্তু ‘সোর্স’ মোশাররফ হোসেন ‘ভুল তথ্য’ দিয়ে হাবিব শেখের পরিবর্তে হাবিবুর রহমানকে ধরিয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার মাদকের আখড়া বলে পরিচিত বরিশাল কলোনিতে হাবিবসহ দুজন নিহত হওয়ার পর মোশাররফকেও কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
র্যাব বলছে, নিহত হাবিব ছিল চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা, তার বিরুদ্ধে ১২টি মাদক মামলা ছিল। তার স্ত্রী মর্জিনার বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে দুটি।
প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে মর্জিনা ছিলেন না। হাবিবের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে সানজিদা রহমান ইভা, ছেলে আব্দুল আলী রাব্বি, শাশুড়ি হাসিনা বেগম ও শ্যালিকা লায়লা আক্তার ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
ইভা বলেন, “ঝাউতলায় যে জমিতে আমরা থাকি সেটা স্থানীয় ইকবাল, সুমন, রাসেদ ও মিন্টু দখলে নিতে চেয়েছিল। আমার বাবা এর প্রতিবাদ করায় নানাভাবে হয়রানি করা হত। প্রশাসনের (পুলিশ প্রশাসন) সহায়তায় ভয়ভীতি দেখানো হত এবং একের পর এক মামলা দেয়া হয়। সবশেষে আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে।”
কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, “আমরাও চাই মাদকমুক্ত বাংলাদেশ হোক। কিন্ত আমার বাবার মতো কেউ যেন ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়।”
ইভা বলেন, “মর্গে সিভিল পোশাকে থাকা কিছু লোক বলছিল, ভুল তথ্যের কারণে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। পরে মোশারফের স্ত্রীও আমাদের একই কথা বলে।
“মৃত্যুর পরও তারা (র্যাব) আমার বাবার ঠিকানা ও পরিচয় সঠিকভাবে জানত না। তাই প্রথম দিন শুধু মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রকাশ করে।”
রাব্বি বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাউতলা বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে বাবার সাথে আমিও নামাজ পড়ি। তিনি আগে মসজিদ থেকে বের হন।
“আমি মসজিদ থেকে বের হলে লোকজন আমাকে বলে চারজন লোক তোমার বাবাকে নিয়ে গেছে। এরপর কোতোয়ালি থানা, ডিবি এবং আবগারিতে (মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) গিয়ে বাবার খোঁজ পাইনি।”
রাব্বি বলেন, “পরদিন মর্গে গেলে আরেক নিহত মোশারফের স্ত্রী নাজমা আক্তারের সাথে দেখা হয়। নাজমা বলেন তার স্বামী মোশারফ র্যাবের সোর্স ছিল।
“র্যাব হাবিব শেখ নামের একজনকে খুঁজছিল। কিন্তু মোশারফ নিজেই হাবিব শেখের লোক ছিল। তাই সে আমার বাবাকে র্যাবের হাতে তুলে দেয়।”
নাজমার বরাত দিয়ে রাব্বি বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে র্যাবের লোক মোশাররফকে মোবাইলে ফোন দিয়ে ডেকে নেয়। ভুল তথ্য দেওয়ায় মোশারফকেও বন্দুকযুদ্ধে দেওয়া হয়।”
ইভা দাবি করেন, হাবিবকে ধরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোশাররফ অর্থ পেয়েছিলেন বলে তার স্ত্রী নাজমা স্বীকার করেছেন।
ঝাউতলায় আগে থাকার সুবাদে নাজমার সঙ্গে পরিচয় থাকার কথাও জানান ইভা।
হাবিব বেশ কিছুদিন ওমানে ছিলেন। বিদেশ থেকে ফিরে কিছুদিন কাঁচা সবজির ব্যবসা করার পর এখন কিছু করছিলেন না। প্রায় এক মাস জেল খেটে গত মঙ্গলবার তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হাবিবের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানাতেই সাতটি মাদক মামলা আছে। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ও ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর হাবিব দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
পুলিশ জানায়, কোতোয়ালী থানায় হাবিবের স্ত্রী মর্জিনার বিরুদ্ধে দুটি মাদক মামলা রয়েছে।