সাতকানিয়ায় ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে প্রাণ গেল ৯ নারীর

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি ইস্পাত কারখানার মালিকের পক্ষ থেকে বিতরণ করা ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে ভিড়ের চাপে নয় নারীর মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2018, 08:03 AM
Updated : 14 May 2018, 04:44 PM

সোমবার দুপুরের আগে আগে সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা (হাঙ্গরমুখ) এলাকার কাদেরীয়া মুঈনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার মাঠে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান।

কেএসআরএম শিল্প গ্রুপের মালিক মো. শাজাহানের গ্রামের বাড়ি গাতিয়াডাঙ্গায়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর রোজার আগে স্থানীয় দুস্থতের মধ্যে ইফতারি তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়।  

এর ধারাবাহিকতায় সোমবার নলুয়ায় ওই মাদ্রাসার মাঠে ইফতার সমাগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা হলে সকাল থেকে প্রায় ২৫ হাজার লোক জড়ো হয়।

সেখানেই ‘অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে গরম আর চাপাচাপিতে’ মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে বলে নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিড়ের মধ্যে অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত নয়জনের লাশ উদ্ধার করেছে। আরও কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

নিহতরা হলেন- সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া গ্রামের ইসমাইলের স্ত্রী হাসিনা আক্তার (৩৫), দক্ষিণ ঢেমশা রাস্তার মাথা এলাকার হাসান ড্রাইভারের স্ত্রী রিনা বেগম (৩২), উত্তর ঢেমশা মোবারক হোসেনের মেয়ে সাকি (২২) এবং খাগড়িয়া রসুলপুর মহাজন পাড়ার নূর হোসেনের স্ত্রী রশিদা আক্তার (৫৪);  লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান গ্রামের আবদুস সালামের মেয়ে টুনটুনি বেগম (১৫), উত্তর কলাউজানের আলাউদ্দিনের মেয়ে নূরজাহান (১৮) এবং কলাউজানের রসুলবাদ গ্রামের আব্দুল হাফেজের স্ত্রী জোস্না আকতার (৫০); চন্দনাইশ উপজেলার পূর্ব দোহাজারীর নূর ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৬০)এবং বান্দরবান জেলার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিমের স্ত্রী নূর আয়শা (৬০)।

কেএসআরএম-এর সিইও মো. মেহেরুল করিম বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও ইফতার সমাগ্রী বিতরণের সময় তাদের এমডি মো. শাজাহান ওই মাঠে উপস্থিত ছিলেন। ছোলা, সেমাই, চিনি, পেঁয়াজের মত বিভিন্ন পণ্য মিলিয়ে ২০ হাজার মানুষের জন্য প্যাকেট তৈরি করা হয়েছিল।

“অন্য বছর কেবল এ গ্রামের লেকজনকে দেওয়া হয়। এবার আশপাশের অন্য কয়েকটি গ্রামের লোকজন চলে আসায় ভিড় বেড়ে গেছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম। পুলিশ এসেছিল, আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটির ১০০ জনের বেশি লোক ছিল। একটা মেডিকেল টিমও রাখা হয়েছিল মাঠের পাশে। তারপরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।”

মেহেরুল করিম বলেন, মারা যাওয়া প্রত্যেকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবেন তারা। আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার কোম্পানির পক্ষ থেকেই বহন করা হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কেউ যদি কেএসআরএম-এ চাকরি করতে চায়, সে ব্যবস্থাও করা হবে।

এদিকে সাতকানিয়ায় ভিড়ের চাপে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীরের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামে রোজা ও ঈদের আগে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপলক্ষে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে দুস্থদের মধ্যে দানের টাকা ও বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণের রেওয়াজ আছে ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে। এছাড়া বিভিন্ন উপলক্ষে মেজবানে দাওয়াত দিয়ে পুরো গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর রেওয়াজও পুরনো।

২০০৫ সালের অক্টোবরে সাতকানিয়ায় এই কেএসআরএম মালিকের জাকাত নিতে এসেই পদদলনে আটজনের মৃত্যু হয়েছিল।

গতবছর ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে মৃত্যু হয় দশ জনের।

বাংলাদেশে পদদলনে হতাহতের দুটো বড় ঘটনা ঘটেছিল ২০১৫ সালে। ওই বছর জুলাই মাসে ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে ২৭ নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়। তার আগে মার্চ মাসে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী পুণ্যস্নানের সময় পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়।