আশরাফের ইয়াবার কারবার শুরু সৌদি আরবে প্রবাস জীবনে

চট্টগ্রামের হালিশহরে এক বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ যে দুই ভাইকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে বড় ভাই আশরাফ আলী এই মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েন সৌদি আরবে বসবাসের সময়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2018, 12:23 PM
Updated : 4 May 2018, 12:52 PM

নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে হালিশহরের শান্তিবাগ শ্যামলী আবাসিক এলাকায় ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে আশরাফ (৪৮) ও তার ভাই মো. হাসানকে (২৪) গ্রেপ্তার করেন তারা।

আশরাফ ও হাসান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জেডএস অ্যাঞ্জেলস নামের ওই বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তাদের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। তিন বছর ধরে তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছিলেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য। 

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) আবু বকর সিদ্দিক শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রায় দুই দশক সৌদি আরবে থাকার পর গতবছর শেষ দিকে দেশে ফিরে আসেন আশরাফ। সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় তিনি ভাইয়ের সহযোগিতায় মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালানের কারবার শুরু করেন।  

“গত এপ্রিলে আশরাফ মিয়ানমারে গিয়ে নৌপথে ইয়াবার চালান নিয়ে দেশে ফেরেন। বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি জেলে পাড়ায় ট্রলার থেকে ইয়াবা নামিয়ে তিনি নিজের বাসায় নিয়ে যান। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে অভিযানে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।”

অভিযানে আশরাফের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে প্রথমে ঘরের ভেতরে তিন লাখ ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যে বাড়ির গ্যারেজে রাখা একটি প্রাইভেট কার থেকে আরও ১০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আশরাফ সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়া আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সেখানে আশরাফের পরিচয় হয়। মূলত রহিমের মাধ্যমেই আশরাফ ইয়াবা চোরাচালানের পথ খুঁজে পান।

জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফ পুলিশকে বলেছেন, রহিমের মাধ্যমে তার যোগাযোগ হয় লা-মিম নামে মিয়ানমারের এক নাগরিকের সঙ্গে। তিনি যখন সৌদি আরবে ছিলেন, তখন ছোট ভাই হাসানকে ইয়াংগুনে পাঠিয়ে তার মাধ্যমে ইয়াবার চালান এনে দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন।

পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর সৌদি আরব থেকে একেবারে দেশে ফিরে আসেন আশরাফ। এ বছর ৭ এপ্রিল তিনি আকাশপথে ইয়াংগুনে যান।

“গত ৩০ এপ্রিল সে ট্রলারে করে ইয়াবা নিয়ে দেশের পথে রওনা হয়। সেন্টমার্টিনের কাছে দেশের জলসীমায় আসার পর ট্রলার থেকে ইয়াবার বস্তা স্পিড বোটে তুলে নিজেই চালিয়ে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হন সে।

“সে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, শবে বরাতের রাতে কুতুবদিয়া এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে তার স্পিড বোট উল্টে যায়। তখন স্থানীয় জেলেরা তাকে উদ্ধার করে। কিছু বস্তা তখন পানিতে ভেসে যায়, আর বাকিগুলো জেলেরা তুলে দেয়। জেলেদের নাকি সে বলেছিল যে ওই বস্তায় কসমেটিকস আছে।”

উদ্ধার পাওয়ার পর এক লাখ টাকায় একটি ট্রলার ভাড়া করে বুধবার কুতুবদিয়া থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি জেলে পাড়ায় পৌঁছান আশরাফ। পরে মাল নিয়ে পৌঁছান চট্টগ্রামের বাসায়।  

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বকর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তিন বছর ধরে আশরাফ ইয়াবা বিক্রির সাথে জড়িত। সে মূলত বন্ধের দিনগুলো পাচারের জন্য বেছে নিত যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ হয়।”

মাদক চোরাকারবারিরা দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার থেকে সাগরপথে বাংলাদেশে ইয়াবা আনছে। পরে তা চট্টগ্রাম থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

আমেরিকার পার্টি ড্রাগ ইয়াবা এক সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের কাছে নেশার বড়ি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালে র‌্যাবের এক অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধারের পর বাংলাদেশে এ নেশাদ্রব্য ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ইয়াবার ছোট-বড় চালান ধরা পড়ছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় মিয়ানমার থেকে আসা এক ট্রলারেই সাড়ে ২৭ লাখ ইয়াবা পাওয়া যায়।