নিবন্ধিত ৩২১ পরিবহন ব্রোকার পেলেন পরিচয়পত্র

চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাক, কভার্ড ভ্যান বন্দোবস্তকারী বা ব্রোকারদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করে ৩২১ জনকে দেওয়া হয়েছে পরিচয়পত্র।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2018, 02:47 PM
Updated : 23 April 2018, 02:48 PM

আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে এই ৩২১ জনের বাইরে কেউ পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক-কভার্ড ভ্যান সরবরাহ করতে পারবে না।

পণ্য পরিবহন ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মার্কেট অপরাধ প্রতিরোধ কমিটির তত্ত্বাবধানে এ বন্দোবস্তকারীদের তথ্য সংগ্রহের পর পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মালামাল পাঠানোর জন্য দৈনিক যে পরিমাণ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান প্রয়োজন হয় সেগুলোর যোগান দিয়ে থাকেন ব্রোকাররা। পরিবহন সংস্থাগুলোকে (ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি) নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে তারা ট্রাক-কভার্ড ভ্যান সরবরাহ করে।

চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি রেল গেইট এলাকা থেকে মূলত ট্রাক-কভার্ড ভ্যানগুলো সরবরাহ করা হয়ে থাকে। স্থানটি ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মার্কেট নামে পরিচিত।

পরিবহন সংস্থার মালিকদের দাবি, ওই এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি ট্রাক-কভার্ড ভ্যান বন্দোবস্ত বা ব্রোকারির কাজে নিয়োজিত থাকলেও তাদের অধীনে আরও কয়েকশ লোক এ কাজে যুক্ত।

আগে এসব ব্রোকারদের সঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও এখন নির্ধারিত ৩২১ জনের বাইরে আর কেউ এ কাজ করতে পারবে না।

মাদারবাড়ির ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মার্কেটকে ঘিরে একটি অপরাধী চক্র সক্রিয় আছে, যাদের কাছে পরিবহন মালিকরাও জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওই এলাকার আধিপত্য নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর খুন হয় যুবদল নেতা হারুণ অর রশিদ চৌধুরী। অভিযোগ আছে, ব্রোকারদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

হারুণ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রোকারদের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। নাম ছাড়া ব্রোকারদের কোনো পরিচয় বা কোনো তথ্য পরিবহন মালিকদের কাছে ছিল না। এরপর থেকে পুলিশের নির্দেশে ব্রোকারদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করে পরিচয়পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পণ্য পরিবহন ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মার্কেট অপরাধ প্রতিরোধ কমিটি ব্রোকারদের তথ্য সংগ্রহ করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তা তদন্ত করে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়েছে।

ব্রোকারদের তথ্যগুলো কমিটি সংরক্ষণ করবে এবং পুলিশ তা তদারকি করবে বলে জানান তিনি।

হারুণ হত্যাকাণ্ডের পর ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মার্কেটে অপরাধ দমনের জন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও ব্রোকারদের সমন্বয়ে এ কমিটি করা হয়েছে।

কমিটির সদস্য ও আন্তঃজিলা ট্রাক মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুফিউর রহমান টিপু জানান, গত ২০ জানুয়ারি তথ্য সংগ্রহের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য ফরম বিতরণ করা হয় ব্রোকারদের মধ্যে।

তিনি বলেন, ব্রোকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য পুলিশ যাচাই-বাছাই করে দেওয়ার পর ৩২১ জনকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।

“আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পরিচয়পত্র পাওয়া ৩২১ জন ব্রোকার ছাড়া অন্য কেউ ট্রাক কভার্ড ভ্যান সরবরাহ করতে পারবে না।”

মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে আগে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না মন্তব্য করে পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, মূলত পরিবহন ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

“বিভিন্ন সময় আমদানি করা বিভিন্ন পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর সময় অহরহ চুরির ঘটনা ঘটত। ব্রোকাররা গাড়ি সরবরাহ করলেও মালামালগুলো ঠিক মতো পৌঁছেছে কিনা তার দায়দায়িত্ব নেয় না এবং গাড়িগুলোর কাগজপত্র ও চালকের তথ্য ঠিক আছে কিনা তারও সঠিক কোন তথ্য থাকে না তাদের। ফলে চুরি হওয়া পরিবহনগুলোর চালক, মালিকের সন্ধান পাওয়া যায় না।”

ব্রোকারদের তথ্য ভান্ডার তৈরির ফলে এখন যেকোনো দুর্ঘটনায় চালক-মালিকদের তথ্য সংগ্রহ করা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে ব্রোকারদের পরিচয়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ করা পরিবহনগুলোর জন্য স্লিপ প্রথাও চালু করা হয়েছে।

গাড়ির নম্বর, চালক, মালিক ও সহকারীর নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, মালিকের সংগঠনের নাম, সদস্য নম্বর, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির নাম, পণ্যের নাম, পরিমাণ, ব্রোকারের নাম ও সদস্য নম্বর লেখা আছে এ স্লিপে।

পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, “এসব স্লিপ একটি চালকের কাছে, একটি বড় দারোগার হাট ওজন স্কেলে, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কাছে, অপরাধ প্রতিরোধ কমিটির কার্যালয়ে ও একটি ব্রোকারের কাছে সংরক্ষিত থাকবে।”

এর ফলে মালামাল চুরির আশঙ্কা কমবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব তথ্যও সংরক্ষণ করা হবে। ফলে সারা দেশের পণ্য পরিবহনগুলোরও একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি হবে।