রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮ মাসে ১৫টি খুনসহ ১৬৩ অপরাধ

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকরা গত আট মাসে ১৫টি হত্যাকাণ্ডসহ মোট ১৬৩টি অপরাধে জড়িয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে পুলিশ।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2018, 02:37 PM
Updated : 16 April 2018, 02:37 PM

খুনের পাশাপাশি ধর্ষণ, অপহরণ, চোরাচালান, ডাকাতির প্রস্তুতির মতো অপরাধও রয়েছে। এসব ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৩৬ রোহিঙ্গাকে।

তবে পুলিশ মনে করছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা বিবেচনায় এই সংখ্যা ‘শঙ্কিত হওয়ার মতো নয়’।

কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ৪ লাখের মতো রোহিঙ্গার অপরাধ প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের।

এই রোহিঙ্গাদের অনেকে জালিয়াতি করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল।

এরপর গত বছরের অগাস্টে রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরুর পর আরও সাত লাখ রোহিঙ্গা যোগ হয় বাংলাদেশে। সব শরণার্থীই রয়েছেন সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে।

ভিটে মাটিহারা হয়ে দেশছাড়া এই উদ্বাস্তুরা অপরাধী চক্রের সহজ শিকার হতে পারেন বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন।

সোমবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিআইজি ড. এস এম মনির-উজ-জামান গত বছরের ২৫ অগাস্ট নতুন করে শরণার্থী আসার পর থেকে সংঘতি অপরাধমূলক কমর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের অভিযোগে গত জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয় এই দুজনকে

তিনি বলেন, গত ২৫ অগাস্ট থেকে এই পর্যন্ত ১৬৩টি মামলা হয়েছে, যাতে মোট আসামি ৩৩৬ জন।

এর মধ্যে অস্ত্র মামলা ১২টি, মাদক সংক্রান্ত ৫৮টি, ধর্ষণ সংক্রান্ত দুটি, ফরেন অ্যাক্টে ৪০টি, চোরাচালানে পাঁচটি, চুরি সংক্রান্ত একটি, ডাকাতি প্রস্তুতির পাঁচটি, হত্যা ১৫টি, অপহরণ তিনটি এবং অন্যান্য ২২টি।

ডিআইজি মনির বলেন, “তাদের অপরাধের পরিসংখ্যান বা প্রবণতা যতটুকু জানি- একটু অপরাধ প্রবণ। তারা একটা কনফাইনড (সীমাবদ্ধ) জায়গা থেকে এসেছে। তবে শঙ্কিত হওয়ার মতো অপরাধ ঘটেনি।

“এখানে যে অপরাধগুলো ঘটছে, সেগুলো মূলত ভালো লাগা না লাগা, পারস্পরিক …। একটা জায়গায় বসবাস করতে গেলে যে সমস্যা হয় তা থেকে উদ্ভূত অপরাধ।”

তিনি বলেন, “ওপারের অপরাধ প্রবণ কিছু ডাকাত এপারে এসেছে বলে সংবাদ পেয়েছিলাম। তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সফলতা পেয়েছি। চিহ্নিত যে নামগুলো এসেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১১ লাখ দুই হাজার ৩৭২ জন এসেছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে ১১ লাখ দুই হাজার ২৬৪ জনের নিবন্ধন করা হয়েছে।

শরণার্থী প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এই দফায় আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের পর অচিরেই প্রত্যাবাসন শুরুর আশ্বাসও দিয়ে গেছেন মিয়ানমারের ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী।

ফেরত নেওয়ার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসনের একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে। তবে সেখানে সবার স্থান সঙ্কুলান হবে না। ফলে কক্সবাজারে তাদের অবস্থান থাকছেই।

কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড়ের গাছ কেটে ঘর তৈরি করে রোহিঙ্গারা: ছবি-মোস্তাফিজুর রহমান

ডিআইজি মনির বলেন, অপরাধ ঠেকাতে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

“খুব ক্লোজলি তাদের মনিটর করা হচ্ছে। শুধু পুলিশ নয়, সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, বিজিবি এবং রিলিফ ও পুনর্বাসনে সেনাবাহিনীও কাজ করছে। এতগুলো এজেন্সির চোখ ফাঁকি দিয়ে অতিমাত্রায় অপরাধ সংঘটিত করা আসলেই কঠিন।”

বৌদ্ধপ্রধান দেশ মিয়ানমার থেকে উৎখাত হওয়ার মুসলিম রোহিঙ্গাদের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কয়েকটি এনজিওর কাজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

ডিআইজি মনির বলেন, “কিছু এনজিওর নিজস্ব কিছু লক্ষ্য আছে। সেগুলো কিন্তু আমরা চিহ্নিত করেছি। এনজিও ব্যুরো এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিবিড়ভাবে সেগুলো মনিটর করছে। রিলিফ ওয়ার্কের বাইরে যাদের অভিসন্ধি ছিল, তাদেরকে চিহ্নিত করেছি। সরকারকে অবহিত করেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”

সব সরকারি সংস্থার গোয়েন্দা শাখা সেখানে কাজ করছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা।

ইয়াবা পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই রোহিঙ্গা

“স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং অভ্যন্তরীণ-নিরাপত্তা শৃঙ্খলার প্রশ্নে আমরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নই। আমাদের মনিটরিং এবং পুলিশি একটিভিটি অত্যন্ত জোরালো।”

সম্প্রতি বিজিবি ও বিজিপির পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাকিস্তানি থাকার অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে ডিআইজি মনির বলেন, “আমরা সেটা মনে করি না। এই এলাকায় আমাদের মনিটরিং সিস্টেম এতটা নিবিড় এখানে ওই কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।

“এখানে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের বা উস্কানিদাতা যে কোনো মোড়কেই হোক, গোপন করে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের অবকাশ আছে বলে মনে করি না।”