কোরিয়ান ইপিজেডে হচ্ছে নতুন ৪৫ কারখানা

কোরিয়ান ইপিজেডে তৈরি পোশাক, জুতা ও বস্ত্র খাতের নতুন ৪৫টি কারখানা স্থাপন হচ্ছে, যেগুলো আগামী তিন বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

মিন্টু চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2018, 05:18 AM
Updated : 10 April 2018, 06:16 AM

নতুন কারখানার সবগুলো কোরিয়ান ইপিজেডের মূল মালিক প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ান করপোরেশন স্থাপন করবে।

কারখানাগুলো চালু হলে প্রায় তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং এর মধ্য দিয়ে আনোয়ারা-পটিয়া-কর্ণফুলীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।

কোরিয়ান ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে সু ও টেক্সটাইল খাতের ২৫টি কারখানা উৎপাদনে আছে। নতুন করে আরও ৪৫টি করে কারখানা নির্মাণ করা হবে। 

এগুলোর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বর্গফুটের ৯টি কারখানা নির্মাণাধীন রয়েছে, যা এবছরেই উৎপাদনে যাবে। বাকি ৩৬টির কাজ ২০২০-২১ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান তিনি।

শাহজাহান বলেন, “এসব কারখানায় সরাসরি একলাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় তিনলাখ লোক কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত হবে বলে আশা করছি।” 

ইপিজেডে চারটি টেক্সটাইল জোন, একটি আইটি জোন ও মহিলা শ্রমিকদের জন্য ডরমটিরিসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ চলছে বলে জানান তিনি।

এখানে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ দেখালেও জমির নামজারি (মিউটেশন) জটিলতায় এখনো তাদের কারখানা স্থাপন করতে পারছেন না উল্লেখ করে শাহজাহান বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির জন্য মিউটেশন জরুরি।

“বেসরকারি ইপিজেড করার জন্য সরকারের সকল ধরণের শর্ত পূরণ করা হয়েছে। জোন গেজেট হয়েছে, প্রশাসন থেকে পুরো জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে। নামজারি হওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা আছে বলে মনে করি না।”

কিছু লোক কেইপিজেড সম্পর্কে অতীতে ভুল তথ্য দিয়েছে মন্তব্য করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, “ব্যুরোক্রেটিক সমস্যা ছাড়া আর কোন সমস্যা নামজারির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করি না।”

খুব অল্প সময়ের মধ্যে জোনের নামজারি সম্পন্ন হওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে স্যামসাং, এলজির মতো বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ আসবে।

“বিদেশি কোম্পানি না আসলেও ইয়ংওয়ান করপোরেশনের বিভিন্ন কোম্পানি এখানে তাদের নুতুন নতুন কারখানা স্থাপন করছে এবং স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে অত্র অঞ্চল ও চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে।”   

চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় বেসরকারি খাতে ইপিজেডগুলোর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) দুই হাজার ৪৯২ একর জমি ওপর অবস্থিত।

১৯৯৯ সালের ৩ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ান করপোরেশনের অর্থায়নে স্থাপিত কেইপিজেড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর পরিবেশ ছাড়পত্র পাবার পর শর্তানুয়ায়ী মোট প্রকল্পের ৫২ শতাংশ জমি সবুজায়ন, লেক রেখে বাকি ৪৮ শতাংশ অর্থাৎ একহাজার ১৯২ একর জমির মধ্যে ৯৯০ একর শিল্প স্থাপন ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত করেছে।

কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, বাকি ২০২ একর জমি আগামী শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে শিল্পায়নের জন্য প্রস্তুত করা হবে।

২০১১ সালের ২ অক্টোবর কেইপিজেডে ইয়ংওয়ান করপোরেশনের প্রথম কারখানা কর্ণফুলী সু ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে উৎপাদনে যায়।

বর্তমানে কেইপিজেড এ ইয়ংওয়ান করপোরেশনের অর্ন্তভুক্ত কর্ণফুলী সু ছাড়াও , কর্ণফুলী গার্মেন্টস, কর্ণফুলী পলিয়েস্টার প্রোডাক্ট, এভারটপ প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, গায়া প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও দেইগু প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। 

এ কারখানাগুলোর ২৫টি ইউনিট উৎপাদনে গেছে এবং তাতে ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে যাদের অধিকাংশই স্থানীয়।

এসব কারখানার মধ্যে শুধুমাত্র কর্ণফুলী সু এবং গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ (কেএসআই) ২০১৭ সালে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। এ বছর তার বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।