নৌকা যার হাতে, আমরাও তার সাথে: নওফেল

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2018, 07:19 AM
Updated : 19 March 2018, 07:22 AM

রোববার চট্টগ্রামের চশমা হিলে পৈত্রিক বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যখন নওফেল এ মন্তব্য করেন. তখন তার পাশে ছিলেন হাস্যজ্জ্বল সাংসদ এম এ লতিফ।

বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সাংসদ লতিফ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত।

রোববার মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমা হিলের বাড়িতে ত্রৈমাসিক ফাতেহা অনুষ্ঠানে যোগ দেন লতিফ। তিনি মহিউদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে আলাপও করেন।

ফাতেহা অনুষ্ঠানে এম এ লতিফের যোগদান এবং রাজনৈতিক বিষয়ে তার নানা বক্তব্যে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। এ সময় মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে লতিফকে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার সামনেও দাঁড়াতে দেখা যায়।

এক পর্যায়ে তিনি উপস্থিত সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সন্তানদের সঙ্গে রাজনীতি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। 

পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ নিয়েও লতিফ মুখ খোলেন। নগরীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় তিনি নওফেলের সঙ্গেই সাংবাদিকদের সামনে আসেন।

নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন কোনো মেরুকরণ হচ্ছে কী না- এমন প্রশ্নে নওফেল বলেন, “না, না। আমি কোনো মেরুকরণে নেই, ঢাকায় রাজনীতি করি।”

অতীতে লতিফের অবস্থান এবং রোববারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নওফেল বলেন, “আমি যে দল করি, উনিও সে দল করেন। আমাদের মধ্যে এনিমিটি (শত্রুতা) কেন থাকবে? আমি কোনো এনিমিটেতে নেই।

“সবচেয়ে বড় কথা সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নেত্রী যাকে মনোয়ন দেবেন তাকেই জিতিয়ে আনতে হবে। সে যেই হোক। নৌকা যার হাতে, আমরা তার সাথে।”

এই লতিফ, সেই লতিফ

লতিফ একসঙ্গে রাজনীতি করার যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তা গ্রহণ করবেন কী না- এ প্রশ্নে মহিউদ্দিনের ছেলে নওফেল বলেন, “আমি নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য, উনিও। গ্রহণ-বর্জনের প্রশ্ন আসবে কেন? আমরা তো একই দল করি।”

এ সময় লতিফ সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন- “আমরা দু’জনই একই দলের। আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আপনারা ইতিবাচক ভাবে দেখেন, না কি নেতিবাচকভাবে?”

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি লতিফ ২০০৮ সালে আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন।

২০০৯ সালের ৩১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন চাষী কল্যাণ সমিতির এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে উঠে সমালোচনায় পড়েন তিনি।

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল, চট্টগ্রাম চেম্বার এবং চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে তার অবস্থান ছিল তখনকার নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনের বিপরীতে, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের পক্ষে।

২০১৬ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে নগরীতে লাগানো বিলবোর্ডে জাতির জনকের ছবি বিকৃতির অভিযোগ উঠলে লতিফের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। তখন মহিউদ্দিন চৌধুরী লালদীঘির জনসভা থেকে লতিফের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার দেন।

ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর লতিফকে নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

নাছিরের সঙ্গে দূরত্ব, নওফেলে আস্থা

সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় লতিফ নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধুর আর্দশের একজন কর্মী’ দাবি করে বলেন, “আমার মূল কাজ দলের ভাবমূর্তি জনগণের কাছে বৃদ্ধি করা।”

আ জ ম নাছিরের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে লতিফ বলেন, “আমরা দু’জনই আওয়ামী লীগ করি। একই দল করে দূরত্ব হওয়ার কারণ কী তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। দূরত্ব কারো ব্যক্তিগত কারণে হয়ে থাকলে তার জন্য তো আমি দায়ী নই। আমি মনে করি, দলের আদর্শ ও উদ্দেশ্য উপলব্ধি করে জনগণের আস্থা আর্জন জরুরি।”

নাছিরের সঙ্গে দূরত্বের কারণেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় এসেছেন কী না- প্রমন প্রশ্নও লতিফকে করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, “না। আমি আগেও এই বাসায় এসেছি। হয়তো গ্রুপিং এর কারণে আসা-যাওয়া কম ছিল। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীর যে ত্যাগ-অবদান ও ভূমিকা, তা অন্য কোনো রাজনীতিকের নেই। গ্রুপিং এর কারণে হয়ত দূরে ছিলাম।”

আর মহিউদ্দিনের ছেলেদের সম্পর্কে সাংসদের মূল্যায়ন, “নওফেল ও সালেহীন (বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন) ‍দুজনই সুশিক্ষিত। আচার-ব্যবহার ভালো। তারা কাউকে অমর্যাদা করবে না।

“যাদের জ্ঞানের পরিধী কম তারাই মানুষকে ছোট করে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তারা সব উত্থান-পতন দেখেছে। তাদের সাথে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করি না।”

নগরীর পরিবর্তে পটিয়ায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আয়োজন নিয়ে লতিফ বলেন, “এটা নিয়ে আমি খুবই আহত। সিটি থেকে পটিয়ার দূরত্ব ১৫ মাইল মাত্র। এটা আমরা যারা সিটির রাজনীতি করি তাদের ব্যর্থতা। মহিউদ্দিন চৌধুরী বেঁচে থাকলে এ রকম হত না।”

অন্যদের মধ্যে নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল, নগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সুনীল সরকার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য চন্দর ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী ও শফিকুল ইসলাম ফারুক, যুবলীগ আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ও যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ফাতেহা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।