ভারতীয় শিক্ষার্থী খুন: উইনসনকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পিবিআই

চট্টগ্রামে ভারতীয় শিক্ষার্থী আতিফ শেখ হত্যার রহস্য উদঘাটনে কারাগারে আটক তার স্বদেশী উইনসন সিংকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনিভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 01:53 PM
Updated : 13 March 2018, 01:53 PM

আগে তিন দফা হেফাজতে নিয়ে কোনো তথ্য আদায় করতে না পেরে চতুর্থ বারের মতো রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করেছে তদন্ত সংস্থাটি। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি স্বদেশী বন্ধু উইনসন সিংয়ের হাতে খুন হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির ভারতীয় শিক্ষার্থী আতিফ শেখ। তবে কেন তাকে খুন করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

“খুনের মোটিভ জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য উইনসন সিংকে পুনরায় হেফাজতে আনা দরকার। এজন্য আদালতে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির এমবিবিএস পড়ুয়া দুই ভারতীয় শিক্ষার্থী আতিফ শেখ ও উইলসন সিংকে গতবছরের ১৪ জুলাই গভীর রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

তারা নগরীর আকবর শাহ থানার আব্দুল হামিদ সড়কের ছয় তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলায় থাকতেন।

এদের মধ্যে আতিফ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন, আর উইলসন ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে ঘটনার পর সহপাঠীর বরাত দিয়ে জানিয়েছিল পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা রক্ত, কাপড় ও ছুরিসহ পাঁচটি আলমতের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠিয়েছিল। সেখানে চারটি আলামতের ডিএনএ এক হলেও একটি ভিন্ন ডিএনএ পাওয়া যায়।

হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ জানিয়েছিল, আব্দুল হামিদ সড়কের ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে আতিফ, উইনসন থাকতেন। ওই ফ্ল্যাটেই পাশের কক্ষে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন আরেক ভারতীয় ছাত্র নিরাজ গুরু। নিরাজের স্ত্রীও ভারতীয় এবং তারা সবাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। চারজনেরই বাড়ি ভারতের মণিপুরে।

হত্যাকাণ্ডের দিন তারা ওই বাসায় ‘মদের পার্টি’ দিয়েছিল যেখানে আতিফ, উইনসন, নিরাজ ছাড়াও দুই বাংলাদেশি সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন। পার্টি শেষে দুই বাংলাদেশি সহপাঠী চলে যাওয়ার পর এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছিল। 

খুনের তিনদিন পর আতিফের বাবা আব্দুল খালেক আকবর শাহ থানায় মামলা করেন। তাতে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি না করলেও আটজনকে সন্দেহের তালিকায় রাখেন তিনি।

এরপর পুলিশ আতিফের স্বদেশী সহপাঠী নিরাজ গুরুকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নিরাজ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং রক্তাক্ত অবস্থায় আতিফকে ও আহতা উইনসনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান।

থানা পুলিশ থেকে পিবিআই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসাধীন থাকা উইনসনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। তাকে দুই দফা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু জানতে না পেরে তার মানসিক পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ড উইনসন সিংকে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদন দিলে তৃতীয় দফায় তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময়ও তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আলামতে পাওয়া ভিন্ন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কারাগারে আটক সন্দেহভাজন উইনসন ও নিরাজের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয় গত ২১ জানুয়ারি।

সোমবার দেওয়া ডিএনএ প্রতিবেদনে ভাঙ্গা ছুরির বাটে পাওয়া ডিএনএর সাথে উইনসন সিংয়ের ডিএনএ মিল পাওয়ার কথা জানানো হয়।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবউদ্দিন আহামেদ বলেন, “উইনসন সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তিনদিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পিবিআই। তবে আদালত আজ শুনানি না করে পরবর্তীতে শুনানির কথা জানিয়েছেন।”