মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আদালতের নির্দেশে কারাগারে আটক সন্দেহভাজন দুই স্বদেশী শিক্ষার্থী উইনসন সিং ও নিরাজ গুরুর ডিএনএ পরীক্ষার করানো হয়েছিল।
“ডিএনএ পরীক্ষায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ছুরির বাঁটে পাওয়া ডিএনএর সাথে উইনসন সিংয়ের ডিএনএর নমুনা মিলেছে।”
তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন আলামতের মধ্যে থেকে পাঁচটি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ভাঙ্গা ছুরির দুই অংশে দুই ধরনের ডিএনএ পাওয়া গিয়েছিল জানিয়ে সন্তোষ বলেন, “ছুরির ধারালো অংশে পাওয়া ডিএনএর সাথে অন্যান্য আলামতের ডিএনএর মিল পাওয়া গেলেও বাঁটে পাওয়া ডিএনএটি ছিল ভিন্নজনের।”
এই ভিন্নজনের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২১ জানুয়ারি উইনসন সিং ও নিরাজ গুরুর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল।
তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, “পরীক্ষার পর ডিএনএ ল্যাব থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ছুরির বাঁট থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সাথে উইনসন সিংয়ের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে।”
অপর স্বদেশী নিরাজ গুরুর ডিএনএ ছুরিতে পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির এমবিবিএস পড়ুয়া দুই ভারতীয় শিক্ষার্থী আতিফ শেখ ও উইনসন সিংকে গতবছরের ১৪ জুলাই গভীর রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
তারা নগরীর আকবর শাহ থানার আব্দুল হামিদ সড়কের ছয় তলা একটি ভবনের পঞ্চম তলায় থাকতেন।
এদের মধ্যে আতিফ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন, আর উইনসন ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে ঘটনার পর সহপাঠীর বরাত দিয়ে জানিয়েছিল পুলিশ।
ঘটনার তিনদিন পর আতিফের বাবা আব্দুল খালেক আকবর শাহ থানায় মামলা করেন। তাতে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি না করলেও আটজনকে সন্দেহের তালিকায় রাখেন তিনি।
এরপর পুলিশ আতিফের সহপাঠী ভারতীয় আরেক ছাত্র নিরাজ গুরুকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নিরাজ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং রক্তাক্ত অবস্থায় আতিফকে ও আহতাবস্থায় উইনসন সিংকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
থানা পুলিশ থেকে পিবিআই মামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে উইনসন সিংকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
এর তিন দফায় তাকে রিমান্ডে নিয়েও কোনো তথ্য আদায় করা যায়নি।
হত্যাকাণ্ডের আগে-পরের সব ঘটনার বর্ণনা দিলেও হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ জানিয়েছিলেন।
দুই দফা রিমান্ডের পর উইনসনের মানসিক অবস্থা জানতে চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করতে আদালতে আবেদন করে পিবিআই। আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষা করে উইনসনকে পুরোপুরি সুস্থ এবং জিজ্ঞাসাবাদে সে ভুলে যাওয়ার কথা বলছে বলে প্রতিবেদন দেয়।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর আরেক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয় উইনসনকে। তাতেও কোনো তথ্য না পাওয়ায় তার ডিএনএ পরীক্ষায় যায় পিবিআই।