ফেনীতে খালেদার গাড়িবহরের পেছনে বিস্ফোরণের মামলায় গ্রেপ্তার শাহাদাত

চট্টগ্রামের দুটি মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন আদেশ চট্টগ্রামে পৌঁছানোর আগে গত অক্টোবরে ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের পেছনে বাসে আগুন-বিস্ফোরণের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2018, 07:38 PM
Updated : 9 March 2018, 07:38 PM

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রামের দুটি মামলায় ডা. শাহাদাত হোসেন জামিন পেয়েছেন। তবে ফেনীর একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এই মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। তাছাড়া ওই মামলায় গ্রেপ্তার দুজন আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তাতেও ডা. শাহাদাতের নাম নেই বলে তার আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ জানিয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে এই বিএনপি নেতার মুক্তি ঠেকাতে তাকে আরও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এজাহারে ডা. শাহাদাতের নাম নেই। জামিনে মুক্তি পাওয়ার প্রাক্কালে এ ধরনের ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক। ভয়ে আছি, মুক্তি বাধাগ্রস্ত করতে আবার অন্য কোনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় কি না। চট্টগ্রামের এরকম কত মামলায় কত অজ্ঞাত নাম খালি আছে।”

৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণার আগেই দুপুরে নগরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় পুলিশকে ইট-পাটকেল ছোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় ডা. শাহাদাতসহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। সেদিন রাতেই দলীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকা থেকে আরও নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার রাতেই নগরীর কোতোয়ালি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়।

ওই মামলা দুটিতে ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। ওই দুই মামলায় ডা. শাহাদাতকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একাধিকবার চট্টগ্রামের আদালতে জামিন আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর হয়। পরে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

শাহাদাতের আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৭ মার্চ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চ শুনানি শেষে ডা. শাহাদাত হোসেনসহ গ্রেপ্তার ১৯ জনের জামিন মঞ্জুর করে।

“সেই আদেশের অনুলিপি এখনও চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেনি। তার আগে আগে ফেনীতে একটি ভাংচুরের মামলায় ডা. শাহাদাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”

শাহাদাতের ব্যক্তিগত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যখন উচ্চ আদালত থেকে চট্টগ্রামের দুই মামলায় জামিনের জন্য চেষ্টা করছি সে সময় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জানতে পারি, ফেনীর মামলাটিতে উনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

“দলীয় চেয়ারপারসনের গাড়িবহর ঢাকায় ফেরার পথে হামলার ঘটনায় যে মামলা হয় সেটির এজাহারে উনার (ডা. শাহাদাত) নামই ছিল না।”

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ঢাকায় ফেরার পথে ফেনীর মহিপালে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের পেছনে দুটি বাসে আগুন, হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ১ নভেম্বর ফেনী মডেল থানায় জেলা যুবদল ও ছাত্রদলের ২৯ নেতাকর্মীরা নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ৩৫-৪০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

এর আগে ২৮ অক্টোবর ফেনীর মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় খালেদা জিয়ার চট্টগ্রামমুখী গাড়িবহরে হামলা হয়। ওই ঘটনায় ১ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।

ওই হামলার পর ২৯ অক্টোবর রাতে একটি ইন্টারনেট সংবাদপত্রে একটি অডিও টেপ প্রকাশ করা হয়, যাতে এক ব্যক্তিকে খালেদার গাড়িবহরে হামলার নির্দেশ দিতে শোনা যায়।

৩০ অক্টোবর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ দাবি করেন, অডিওর নির্দেশদাতার কণ্ঠটি বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাতের।

সেদিন দুপুরেই চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে ডা. শাহাদাত বলেন, অডিও’র কণ্ঠটি তার নয়, ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শাকার।

তবে শাকার দাবি, এ কণ্ঠ তার নয়।

মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, এর আগেও দলীয় চেয়ারপার্সন চট্টগ্রামে আসার পথে হামলার পর একটি ‘ভুয়া’ অডিও টেপ ছাড়া হয়েছিল ডা. শাহাদাতের নামে।

“সেই অডিও টেপ নিয়ে একটি মামলাও হয়েছিল। সেই মামলাটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে খারিজ হয়ে গেছে। বারবার এ ধরনের মামলা দিয়ে ডা. শাহাদাতের মতো নেতাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। দলের অন্য নেতাকর্মীদের কী অবস্থা বুঝতেই পারছেন।”