এমন এক পোস্টার পড়েছে বন্দর নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড় ও আশপাশের এলাকায়। পথচলতি মানুষের নজর সেদিকে। চেরাগীর প্রতিদিনের আড্ডায়ও ঠাঁই মেলে জসিমের। কে এই জসিম?
রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নামে লাগানো পোস্টারের মাঝে ব্যতিক্রমী পোস্টারটি নজর কাড়ে সবার। কেউ কেউ ছবি তুলে ফেসবুকে দেন।
আসলে এটি ষষ্ঠ চেরাগী আর্ট শো’র অংশ। দুই দিনের শো শুক্রবার বিকাল থেকে শুরু হয়েছে।
জসিমের খোঁজ পেতে শিল্পী রাজীব দত্তকে টেলিফোনে পাওয়া গেল। সবটা খোলাসা করলেন না তিনিও।
বলছেন, “জসিম বেঁচে নেই, তাই পোস্টারে মড়ার খুলি। আর ওই যে অনেকের জীবনে প্রেম প্রেম ভাব হয় কিন্তু প্রেম হয় না- তাই তার অনেক দুঃখ, ভালোবাসার আহ্বান।”
বাকিটুকু দর্শকের দেখা ও ভাবনার ওপর হয়ত ছেড়ে দিতে চান শিল্পী রাজীব।
নজর কেড়েছে শিল্পী জিহান করিমের ‘ব্যাটম্যান রাইজেস’। হেফাজতের সমাবেশ, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য সরানোর মুহূর্তে আবার রানা প্লাজায় ধ্বসের পর ব্যাটম্যানের দেখা মেলে বাংলাদেশে।
সাবেক ছাত্রনেতা শ্যামল ধর বলেন, দুর্বৃত্তের কবলে বা গণপিটুনির শিকার ব্যাটম্যানকে দেখে একটু অবাকই হয়েছি। ব্যাটম্যানকে অসহায় মনে হলো।
শিল্পী জিহান করিম এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাটম্যান বিজ্ঞানের শক্তিতে বলীয়ান এক সুপারম্যান। কিন্তু যদি ওইসব গ্যাজেট ছাড়াই তার আর্বিভাব হয় তখন সে সাধারণের মতই।
“বাংলাদেশের অনেক জাতীয় ঘটনাবলীতে, দুর্যোগে এমনকি দুর্বৃত্তের কবলে পড়লেও ব্যাটম্যান আমার মতই অসহায় একজন। সেটাই দেখাতে চেয়েছি।”
চেরাগী পাহাড়ের গলিতে প্রতিদিন যেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, সেখানে যেন বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অধ্যাপক জাহেদ আলী চৌধুরী যুবরাজ।
জাহেদ আলী চৌধুরী যুবরাজ বলেন, শৈশবে রূপকথার গল্প শুনে ও পড়ে আমরা বড় হয়েছি। রূপকথার চরিত্রগুলো শিশুদের চিনিয়ে দিতে হত না। বর্ণনা শুনেই তারা বলতে পারত- কোনটা রাজা আর কোনটা রাক্ষস।
“এখানে টুকরো টুকরো ছবিতে সেই রূপকথার চরিত্রগুলো তুলে ধরতে চেয়েছি।”
দর্শকের নজর কেড়েছে জিয়াশরিন হকের ‘বার্নিং বুদ্ধ, শাহারিয়ার রশিদ ও সালাউদ্দিন নয়নের ‘১২ মার্চ ২০১২’, শায়লা শারমিনের ‘আইডেনটিটি’।
আর্ট শোতে শুক্র ও শনিবার প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের যৌথ প্রযোজনা ‘বেঙ্গল ডিভাইডেড’ নামের ডকুমেন্টারি।
শোর কিউরেটরদের অন্যতম শায়লা শারমিন বলেন, “সাধারণ মানুষকে শিল্পের সাথে সম্পৃক্ততা করতেই আমাদের এ আয়োজন।
এবার পাঁচ শিল্পীর কাজের সঙ্গে থাকা নামফলক ওলট পালট করে দিয়ে প্রদর্শনীতে আসা শিল্পী ও দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানার একটা নিরীক্ষাও করা হয়েছে বলে জানান আরেক কিউরেটর জিহান করিম।
চেরাগী পাহাড়ের কেয়া ম্যানসনের কার্নিশে হাতি, উদ্বাস্তু মানুষ, সাম্পান, অস্ত্রে সজ্জিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, রোহিঙ্গা নারী ও শিশু, বাঙালি পুরুষ, সুচি, আশ্রয় ক্যাম্পের ছবির অবয়ব।
কালো কাগজ কেটে এসব অবয়ব তৈরি করেছেন তাইওয়ানের শিল্পী এইচ ডব্লিউ চ্যাং। প্যানেল আর্টটির নাম ‘চিটাগোনিয়ান?’
তিন সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে থাকা চ্যাং বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ জানে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হচ্ছে।
“তারা নিজের দেশ ছেড়ে চট্টগ্রামে আসছে। ভয়াবহতার ভেতর দিয়ে তারা যাচ্ছে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে।”